স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনয়ন
৩৬ ব্যক্তি ও সাত প্রতিষ্ঠানকে ডিএসইর চিঠি
ব্যবস্থাপনা ও মালিকানা পৃথককরণ (ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন) পরবর্তী নতুন পরিচালনা পর্ষদে সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনয়নের জন্য ৩৬ ব্যক্তি ও সাত প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ইতোমধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জবাব ডিএসই’র হাতে এসে পৌঁছেছে। ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইনানুসারে যোগ্যতার ভিত্তিতে আগামী পর্ষদ সভায় ১৪ জন স্বতন্ত্র পরিচালককে মনোনয়ন দেওয়া হবে। পর্যাপ্ত যাচাই বাছাই শেষে ওই ১৪ জনের মধ্যে সাতজনকে চূড়ান্ত নিয়োগ দেবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ।
ডিএসই’র স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে মনোনয়নের জন্য ওই ৩৬ ব্যক্তি ও সাত প্রতিষ্ঠান বরারব পাঠানো চিঠিতে ১৯টি প্রশ্ন সম্বলিত একটি ফর্ম জুড়ে দেওয়া হয়। ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমে স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনয়নের যোগ্যতা যাচাইয়ে এসব প্রশ্ন সংযুক্ত করা হয়। আগ্রহীদের প্রশ্নের ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ উত্তর দিয়ে ফর্মটি পূরণ করে ডিএসইতে পাঠাতে বলা হয়। চিঠির জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসই যোগ্যতার ভিত্তিতে ১৪জনকে অনুমোদন দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে।
জানা গেছে, গত ২৩ জানুয়ারি ডিএসইর পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় গত বছরের ২৮ নভেম্বর গঠিত নোমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি (এনআরসি) স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনয়নের অগ্রগতি ও সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়ার বিষয়টি পর্ষদকে অবহিত করে। আগ্রহীদের প্রতিউত্তর পাওয়া যাচ্ছে বলে সভায় জানানো হয়।
এর আগে গত ৭ জানুয়ারি এনআরসির চতুর্থ বৈঠকে ডিএসই’র স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইনানুসারে স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনয়নের জন্য যথাযথ যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে (ফিট অ্যান্ড প্রোপার ক্রাইটেরিয়া) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কতিপয় সম্মানিত ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ডিএসই’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্বপন কুমার বালা দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম অনুসারে স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনয়নের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট যোগ্যতার ভিত্তিতে ছয়টি প্রতিষ্ঠান থেকে পৃথকভাবে চারজন করে মোট ২৪জন প্রতিনিধির নাম দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে মনোনয়নের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাবেক ও বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তা(নির্বাহী পরিচালক/পরিচালক/সদস্য/সাবেক সদস্য/ সাবেক গভর্নর/বিভিন্ন সংগঠনের সাবেক সভাপতি), বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সম্মানিত ব্যক্তি ও ডিএসই’র সাবেক সভাপতিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রতিনিধি চাওয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট অব বাংলাদেশ (আইসিএবি), দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) ও ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি)। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ২৪ জনের মধ্যে চারজনকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পাঁচ কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরা হলেন-ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন অব বাংলাদেশের সদস্য অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম, বাংলাদেশ আর্মি হেডকোয়ার্টারের মিলিটারি সেক্রেটারি মেজর জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাসরিন বেগম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ডা. রুহুল আমিন সরকার ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অমলেন্দু মুখার্জী।
আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত চার কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরা হলেন- ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোফাইন্যান্সের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক এম এ বাকি খলিলি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এম কায়কোবাদ, এমএবিএস অ্যান্ড জে পার্টনার্স চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টসের অংশীদার নাসির উদ্দিন আহমেদ ও মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবদুল হাফিজ চৌধুরী।
আরও ১৮ জন সম্মানিত ব্যক্তিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরা হলেন- বিচারপতি আমিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র এডভোকেট আনিসুল হক, ঢাকা ইউনিভার্সিটির সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাডভাইজারের সিনিয়র কনসালটেন্ট আল্লাহ মালিক কাশেমী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম কামাল উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মূসা, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, রহমান রহমান হক চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টসের সিনিয়র কনসালটেন্ট (কেপিজিএম) খালিদ রহিম, দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগের সাবেক সচিব ওয়ালিউল ইসলাম ও কাজী মোহাম্মদ সাত্তার। এছাড়া ৪৬ স্বাধীন পদাতিক বাহিনীর কমান্ডার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমানকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তবে সিনিয়র এডভোকেট আনিসুল হক দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় তিনি ডিএসই’র স্বতন্ত্র পরিচালক হতে ইচ্ছুক নন।
এ ছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে মনোনয়নের জন্য এনআরসি চেয়ারম্যানের(শেখ কবির হোসেন) সঙ্গে আলোচনা করে ডিএসই’র সাবেক সভাপতি বা চেয়ারম্যান এবং পরিচালকদের নাম দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে তাদের এখনও চিঠি দেওয়া হয়নি।
অপরদিকে, আরও একটি প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন, ঢাকা ক্যানটনমেন্ট ও ১০ ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে মনোনয়নের জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরা হলেন- আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন, ঢাকা ক্যানটনমেন্ট, আশরাফুদ্দিন আহমেদ এফসিএ, সিএফসি; অধ্যাপক ডা. হারুনুর রশিদ, বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া, সি এম কায়েস সামি, ডা. বন্দনা সাহা, ডা. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম (মহিউদ্দিন), অধ্যাপক ডা. আর আই এম আমিনুর রশিদ, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও আনিস উজ জামান চৌধুরী।
স্বতন্ত্র পরিচালকের আবশ্যকীয় যোগ্যতা
ডিএসই’র অনুমোদিত ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের ৪.২ এর (এফ) অনুযায়ী স্বতন্ত্র পরিচালকের আবশ্যকীয় যোগ্যতায় উল্লেখ করা হয়েছে- ১০ বছরের পেশাদারী অভিজ্ঞাসহ ব্যবসায় প্রশাসন, অর্থনীতি, পরিসংখ্যাণ, কম্পিউটার বিজ্ঞান, গণিত, লোক প্রশাসন কিংবা আইন বিভাগে স্নাতকোত্তর। তবে উপরোক্ত বিষয়ে শুধুমাত্র স্নাতক (সন্মান) পাস হলে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পেশাদারী পদবি যেমন-সিএফএ, সিএ, সিএমএ, সিএস, সিপিএ ইত্যাদি হলে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে শুধুমাত্র স্নাতক পাস হলে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা লাগবে।
স্বতন্ত্র পরিচালকের অযোগ্যতা
ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের ৪.২ এর (ই) অনুযায়ী যারা স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না- নিয়োগের প্রস্তাবিত তারিখ থেকে পূর্ববর্তী তিন বছর স্টক এক্সচেঞ্জে এবং সংশ্লিষ্ট এক্সচেঞ্জের কোনো সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে কর্মরত থাকলে। পূর্ববর্তী তিন বছর সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সিইও অথবা এমডি পদে কর্মরত থাকলে। পূর্ববর্তী তিন বছরের মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবসায়িক অংশীদার বা শেয়ারহোল্ডার হিসেবে সংশ্লিষ্ট থাকলে। পূর্ববর্তী তিন বছরের মধ্যে অবসর সুবিধা ছাড়া কোনো ধরনের বেতন-ভাতা নিলে। ডিমিউচু্য়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী কোনো পরিচালক, স্টেক হোল্ডার বা শেয়ারহোল্ডারের পরিবারের সদস্য বা ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কোনো স্টেক হোল্ডার, শেয়ার হোল্ডার অথবা পরিচালকের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে। মার্চেন্ট ব্যাংকার অথবা অ্যাসেট ম্যানেজার কোম্পানিসহ ক্যাপিটাল মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারি কোম্পানির সঙ্গে পূর্ববর্তী তিন বছর কর্মরত থাকলে। যে কোনো এক্সচেঞ্জের পরিচালক হলে। যে কোনো এক্সচেঞ্জের শেয়ারহোল্ডার হিসেবে কর্মরত থাকলে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক বা মালিক হলে।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/ডব্লিউএন/এনআই/জানুয়ারি ২৬, ২০১৪)