প্রকৃত হিসেবে লোকসান থাকলেও মুনাফা দেখিয়ে মুল মার্কেটে ফেরার চেষ্টা করছে ওয়াটা কেমিক্যাল। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটের (ওটিসি) এ কোম্পানি কারচুপির মাধ্যমে শেয়ারপ্রতি আয়ের পাশাপাশি সম্পদের পরিমাণ বেশি দেখিয়েছে আর্থিক প্রতিবেদনে। আর ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকলেও ২০১১ সালের তুলনায় ২০১২ সালে কোম্পানির উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে। দ্য রিপোর্টের অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

প্রকৃত হিসাবে ওয়াটা কেমিক্যালের শেয়ারপ্রতি ২.২৪ টাকা লোকসান রয়েছে। কিন্তু ওটিসি থেকে মূল মার্কেটে ফেরার জন্য কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক প্রতিবেদনে ৪.৯৪ টাকা শেয়ারপ্রতি আয় দেখিয়েছে। এ ছাড়া আর্থিক প্রতিবেদনে সম্পদের পরিমাণও অনেক বেশি দেখিয়েছে ওয়াটা কেমিক্যাল।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ‘বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (বিএএস)-১৬’ পরিপালন না করে প্রায় ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ৭.১৮ টাকা অবচয় কম ধরেছে ওয়াটা কেমিক্যাল। কোম্পানিটিতে অবচয় নির্ণয়ে ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।

‘বিএএস-১২’ পরিপালন না করে ১৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা বা ৩৩.৩৭ টাকা শেয়ারপ্রতি সম্পদ বেশি দেখিয়েছে ওয়াটা কেমিক্যাল। একই সঙ্গে অবচয় ধার্য না করে আরো ৭.১৮ টাকার শেয়ারপ্রতি সম্পদের পরিমাণ বেশি দেখানো হয়েছে। পুনর্মূল্যায়িত সম্পদের ওপর ডেফার্ড ট্যাক্স (বিলম্বিত কর) গণনা না করে সম্পদের পরিমাণ বেশি দেখিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

‘বিএএস-১২’ অনুযায়ী, এ কোম্পানিতে ডেফার্ট ট্যাক্স গণনা করা হয়নি। ডেফার্ট ট্যাক্স গণনা করা হলে কোম্পানিটি ২.২৪ টাকার চেয়ে আরো বেশি লোকসানের কবলে পড়ত। কিন্তু অবচয় ও বিলম্বিত কর গণনা না করে মুনাফা দেখানো হয়েছে।

‘বিএএস-১’ অনুযায়ি, আর্থিক প্রতিবেদনে সর্বশেষ অর্থবছরের সাথে তুলনা করার জন্য বিগত বছরের অবস্থা তুলে ধরতে হয়। কিন্তু ওয়াটা কেমিক্যাল কর্তৃপক্ষ স্থায়ী সম্পদে ২০১১ সালের তথ্য প্রকাশ না করে বিএএস পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছে।

ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকায় সম্পদের ওপর অবচয় ধরা হয়নি বলে আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তবে সময়ভিত্তিক অবচয় গণনা করা হয়, উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে নয়।

এদিকে, ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকার কথা বলা হলেও ২০১১ সালের তুলনায় ২০১২ সালে উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে বলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।

কারচুপির আশ্রয় নিয়ে কোনো কোম্পানিকে মূল মার্কেটে ফিরিয়ে আনা ঠিক হবে না বলে মনে করেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ সাজিদ হোসেন। আর কোনো কোম্পানি যদি সিকিউরিটিজ আইন পুরোপুরি পরিপালন করে তাহলে সেটিকে মূল মার্কেটে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. আলী আহসান এ প্রতিবেদককে এড়িয়ে চলেন। গত মাসের ১৭ তারিখে তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকার বাইরে থাকার কারণে ১৯ তারিখে যোগাযোগের কথা বলেন। পরবর্তী সময়ে ১৯ তারিখে পুনরায় যোগাযোগ করা হলে ২১ তারিখের কথা বলেন। এরপরে তিনি অফিস করলেও ২১ তারিখ থেকে আর ফোন রিসিভ করেননি। সর্বশেষ ২৩ তারিখে সংসদ এভিনিউ এলাকায় কোম্পানির অফিসে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এ সময় কোম্পানির অফিস সজ্জার কাজ চলছিল।

(দ্য রিপোর্ট/আরএ/ডব্লিউএন/এনআই/জানুয়ারি ২৬, ২০১৪)