দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ১১ বছরে প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে নয় শত কোটি টাকা। তারপরও শেষ হয়নি সাভারে চামড়া শিল্প স্থানান্তর প্রকল্প। আবারো নতুন করে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৭৬ কোটি টাকা। এ সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ না হলে ব্যয় কি পরিমাণ বাড়বে তা বলা মশকিল বলে জানিয়েছেন বিসিক চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর শিকদার। তাই যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে এ খাতের উদ্যোক্তাদের সহায়তা চাইলেন তিনি।

রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে শনিবার বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) উদ্যোগে ‘চামড়া শিল্প নগরীর উন্নয়ন ও ট্যানারি স্থানান্তর ত্বরান্বিতকরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা জানান।

শ্যামসুন্দর শিকদার বলেন, ২০০৩ সালে ১৭৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয় এ প্রকল্পে। ২০০৫ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। এরপর ২০১২ সাল পর্যন্ত দুইবার এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। তারপরও নানা জটিলতায় যথাসময়ে শেষ করা যায়নি এ প্রকল্পের কাজ। বাধ্য হয়ে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয় এ প্রকল্পের মেয়াদ।

এ সময় বিএফএলএলএফইএ রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি শিল্প-কারখানা দ্রুত স্থানান্তরের জন্য সরকারের কাছে চারটি প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রস্তাবগুলো সরকার বাস্তবায়ন করলে এ শিল্প পোশাক শিল্পের মতো অবস্থান করে নিতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।

প্রস্তাবগুলো হলো- সিইটিপি নির্মাণ ত্বরান্বিত করা। কারণ এ ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়েছে। বিগত সরকারের সময় তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার গাফলতির কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও নির্মাণ কাজের কোন অগ্রগতি হয়নি। পরবর্তীকালে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে ২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর এ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হওয়ায় এখনও তা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগও চূড়ান্ত করা হয়নি। তাই দ্রুত পরামর্শক নিয়োগ এবং নতুন করে আরো ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। যাতে সকল কারখানাকে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়।

এছাড়াও সহজ শর্তে ও কম সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ সহায়তা চেয়েছেন তারা। কারণ এ শিল্প স্থানান্তর করার জন্য নতুন করে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এর বিপরীতে উদ্যোক্তারা ক্ষতিপূরণ পাবেন ২৫০ কোটি টাকা। তাই উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদী ঋণদানের ব্যপারে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দেন তারা। এছাড়াও ক্রেস্ট লেদার ও ফিনিশড লেদার রপ্তানির উপর প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব দেন তারা।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বে ৬০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ফুটওয়্যারের চাহিদা রয়েছে। এর শতকরা ৭৫ ভাগ চীন এককভাবে যোগান দিচ্ছে। বাংলাদেশ ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে চামড়া, ফুটওয়্যার ও লেদারগুডস রপ্তানি করে ৯৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ খাতে কয়েক বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। তারা চামড়া শিল্পকে তৈরি পোশাক শিল্পের মত শক্তিশালী রপ্তানি খাত হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন।

তবে অভিযোগ রয়েছে, সাভারে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরে উদ্যোক্তারা গাফলতি করছেন। প্রাথমিকভাবে সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে ১৯৯ জন আবেদনকারীর মধ্যে ১৫৫ জন উদ্যোক্তাকে প্লট বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে ফ্যাক্টরির লেআউট প্ল্যান জমা দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ জানানো হলেও তারা তা দিচ্ছে না। বরাদ্দ পাওয়া ১৫৫ জনের মধ্যে মাত্র ৫০ জন উদ্যোক্তা তাদের লেআউট প্ল্যান জমা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে জমা দেওয়া ৫০টি আবেদনের ২৫টি প্ল্যানের চুড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোর অনুমোদন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তারা।

অন্যদিকে চামড়া শিল্প উদ্যোক্তাদেরকে কৌশলী না হয়ে বাস্তবসম্মত পথ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন শিল্পসচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ। তিনি জানান, সব শিল্প-কারখানা একসঙ্গে স্থানান্তরের জন্য নতুন করে আরো ২০০ একর জমি বরাদ্দের দাবি না তুলে যেটুকু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাতেই শিল্প-কারখানা স্থানান্তর করুন। বর্তমান প্রকল্প শেষ হলে দ্বিতীয় ফেজের কাজ শুরু করা হবে। এমনিতেই এ প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেড়েছে।

আর সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের দাবি দুটি নয়, একটি প্রকল্পের মাধ্যমেই হাজারীবাগের সব ট্যানারি শিল্পকে সাভারে স্থানান্তর করতে হবে। এছাড়া শিল্প কারখানা করার জন্য ৩৩ শতাংশ জমি ছাড়ের সিদ্ধান্তকেও পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানান তিনি। আর এটি করা হলে আবারো জটিলতার মধ্যে পড়বে বলে মনে করেন বিসিক চেয়ারম্যান।

বিএফএলএলএফইএ’র চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার এম আবু তাহেরর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। অন্যদের মধ্যে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ ও বিসিক চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর শিকদার উপস্থিতি ছিলেন।

(দ্য রিপোর্ট/এআই/জেএম/জানুয়ারি ২৭, ২০১৪)