হজে অনিয়ম
দেড়শ এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা, মানব পাচারসহ হজে নানা অনিয়মের জন্য প্রায় দেড়শ এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে এজেন্সিগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিস জারির প্রক্রিয়া চলছে। জবাব পাওয়ার পর একটি কমিটির মাধ্যমে শুনানি করে অপরাধের ধরন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বলে মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মধ্যে এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল, জামানত বাজেয়াপ্ত, বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানা ও ফৌজদারি মামলা হতে পারে বলে হজ অফিস সূত্রে জানা গেছে।
হজ অফিসার বজলুল হক বিশ্বাস দ্য রিপোর্টকে বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে প্রায় দেড়শ হজ এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হচ্ছে। জবাব পাওয়ার পর তদন্ত করে শুনানি নিয়ে শাস্তি দেওয়া হবে। আশা করছি আগামী মাসের মাঝামাঝি পুরো প্রসেস কমপ্লিট করতে পারবো।
হজ এজেন্সিগুলোর অনিয়মের হার এবার অনেক কম দাবি করে হজ অফিসার বলেন, এবার হজে গিয়ে ফিরে না আসার সংখ্যা ১৭৬ জন। এটা অনেক কম। মোট হজযাত্রীর ২ শতাংশকে আমরা সহনীয় মাত্রা ধরি। এবার এটা দশমিক ০০১ শতাংশেরও কম।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ছোট অপরাধের জন্য এর আগে সতর্ক করা হলেও এবার তা করা হবে না। ছোট অপরাধ যেগুলো এড়িয়ে যাওয়া যায়, ব্যবস্থাপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে সে এজেন্সিগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর যুগ্ম মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার দ্য রিপোর্টকে বলেন, গত বছর ৩৫৫ এজেন্সির মধ্যে ২৮৯টিকে নানা অনিয়মের জন্য অভিযুক্ত করা হয়। এবার ৬২৮ এজেন্সির মধ্যে দেড়শ সেই তুলনায় কম। প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক এটা আমরাও চাই।
গত ১৪ অক্টোবর (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হয়। ১৬ অক্টোবর কোরবানির মধ্য দিয়ে শেষ হয় হজের আনুষ্ঠানিকতা।
হজ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার ৮৭ হাজার ৮৫৪ জন হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যান। হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাত্রার ফ্লাইট গত ৭ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে শেষ হয় ৯ অক্টোবর। হাজিদের ফিরতি ফ্লাইট ১৯ অক্টোবর শুরু হয়ে শেষ হয় ৩০ নভেম্বর। ৬২৮টি হজ এজেন্সির মাধ্যমে বেসরকারি হজযাত্রীরা হজ পালন করে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হাজিদের বাড়িতে না রাখা, যাতায়াতের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা না করা, একই রুমে গাদাগাদি করে রাখা, পর্যাপ্ত গাইড না রাখা, নিম্নমানের খাবার পরিবেশন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেবা না দেওয়া এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাজিদের বাড়িতে রাখতে না পারার মতো অভিযোগ রয়েছে।
মানব পাচারেরও অভিযোগ আছে কোনো কোনো এজেন্সির বিরুদ্ধে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, ৮৭ হাজার ৮৫৪ হজযাত্রীর মধ্যে ৮৭ হাজার ৩৫৬ জন দেশে ফিরেছেন। এখনও সৌদি আরবে থাকার সংখ্যা ৪৯৮ জন। মনে করা হচ্ছে, এরা সেখানে লুকিয়ে কাজকর্মে জড়িয়ে পড়বে।
এবার টাকা নিয়ে হজে না পাঠানোর মতো গুরুতর অপরাধের জন্য ইতোমধ্যে দুই এজেন্সির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করেছে সরকার। এ দুটি এজেন্সি হচ্ছে- সৌদি এয়ার সার্ভিস ও রফিক ট্রাভেল। একই সঙ্গে এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল, জামানত বাজেয়াপ্ত ও আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। গত ২১ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল এ তথ্য জানিয়েছিলেন।
(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এইচএসএম/এএইচ/আরকে/জানুয়ারি ২৭, ২০১৪)