ভোটার আইন মানছে না ইসি
মাহফুজ স্বপন, দ্য রিপোর্ট : ভোগান্তি কমাতে ভোটার তালিকা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইনে ভোটার স্থানান্তরের প্রক্রিয়াও বলা আছে। কিন্তু ভোটার স্থানান্তরের নির্দিষ্ট আইন মানছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, কোনো ভোটার চাইলে যখন ইচ্ছে তখনই ভোটার তালিকা থেকে তার নাম স্থানান্তর করতে পারেন। এ জন্য আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করলেই হয়।
জানা গেছে, সম্প্রতি নির্ধারিত প্রক্রিয়া শেষ করেও অনেকে ভোটার তালিকার নাম স্থানান্তর করতে পারছে না। ইসি এ বিষয়ে ভোটারদের কোনো সহায়তা করছে না। উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান এমন অনেক প্রার্থীই ভোটার তালিকা থেকে নাম স্থানান্তর করতে না পারায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
ভোটার তালিকা থেকে নাম স্থানান্তর করতে ইচ্ছুক এমন অনেকের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের আলাপ হয়। তারা দ্য রিপোর্টকে জানান, তালিকা থেকে নাম স্থানান্তর করতে কমিশনে এসে ধর্না দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। এখন আর স্থানান্তর করা সম্ভব না- কমিশন থেকে এ কথা জানিয়ে ‘আইনের আশ্রয় নিতে’ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তারা আরও জানান, আইন অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার পর যদি কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে তার নিজের এলাকায় প্রার্থী হতে চান তবে তার ভোটার স্থানান্তর করা ইসির দায়িত্ব। কিন্তু ইসি কোনো সহায়তা না করে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।
স্থানান্তর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির ভোটার তালিকা সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ভোটার স্থানান্তর করা কোনো কঠিন কিছু নয়। কমিশন চাইলে যে কোনো সময় তা হতে পারে। তবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার পর এটি বিশেষ কারণে বন্ধ রাখা হয়। একজন প্রার্থী চাইলে কমিশন তা করতে কোনো বাধা নেই।
ভোটার তালিকা আইনের ১০ ধারায় বলা আছে, ‘বিভিন্ন সংস্থার নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার তারিখ হইতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়কাল ব্যতিরেকে, অন্য যে কোনো সময়, নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রয়োজন অনুসারে সংযোজন বা বিয়োজনপূর্বক ভোটার তালিকা সংশোধন করা যাইবে।’
এ ধারার উপবিধি ‘গ’ তে বলা আছে, ‘যিনি বাসস্থান পরিবর্তনের কারণে নতুন নির্বাচনী এলাকার অধিবাসী হইয়াছেন, পূর্বেও ভোটার এলাকার বা ক্ষেত্রমতো নির্বাচনী এলাকার তালিকা হইতে তাহার নাম কর্তনপূর্বক নতুন নির্বাচনী এলাকায় বা ক্ষেত্রমতে, ভোটার এলাকায় তালিকাভুক্ত করা।’
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আইন থাকলেও তফসিল ঘোষণার পর কমিশন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন আর কোনো ভোটারকে স্থানান্তর করা হবে না।’
নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কমিশনের নীতিগত সিদ্ধান্তটি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা এবং এতে ভোটাররা ভোগান্তির মুখোমুখি হচ্ছেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশন সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে না।’
এদিকে দিনাজপুর থেকে আসা একজন ভোটার আনসারুল হক। তিনি দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। বর্তমানে তিনি দিনাজপুর শহরের ভোটার। তিনি তার নিজ উপজেলা বীরগঞ্জে স্থানান্তর হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চান। কিন্তু তিনি কমিশনে এসেও তা করতে পারছেন না।
আনসারুল হক জানান, নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজের সঙ্গে সাক্ষাত করে স্থানান্তরের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন তিনি। কিন্তু কমিশনার অপারগতা প্রকাশ করে আদালতের সহায়তা নেওয়ার জন্য তাকে পরামর্শ দেন বলেও জানান আনসারুল।
দ্য রিপোর্ট/ এমএস/ এনডিএস/এনআই/জানুয়ারি ২৭, ২০১৪)