দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনকারী সকল মন্ত্রী, এমপিদের তদন্তের আওতায় আনতে দুদকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গণমাধ্যমের কাছে পাঠানো এক লিখিত বিবৃতিতে সোমবার সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এই দাবি জানান।

বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রাক্তন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের ব্যাপক সম্পদ বৃদ্ধি যদি তাদের জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তবে তা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং সংবিধানের ২০(২) ধারা অনুযায়ী অসাংবিধানিক। ইতোপূর্বে দুদক এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে কার্যত অনিহা প্রকাশ করলেও সম্প্রতি এ ব্যাপারে যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তা আশাব্যঞ্জক। তবে এ ক্ষেত্রে দুদককে সকল প্রকার করুণা, ভয় বা প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব প্রদর্শন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দুদকের উদ্যোগ সাতজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে বরং অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে এমন প্রত্যেককেই পর্যায়ক্রমে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় কোন যৌক্তিকতা ও মাপকাঠি অনুসরণ করে কাউকে তদন্তের আওতাভুক্ত করা হয়েছে এবং কোন যুক্তিতে অন্যদের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গৃহীত হবে না, তা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।’

ড. জামান বলেন, ‘নবম সংসদের শেষ অধিবেশনে পাশকৃত দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধিত) আইন ২০১৩ এর ৩২(২) ও ৩২ ক ধারা বলে জজ, ম্যাজিস্ট্রেট ও সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগের ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে দুদক কর্তৃক সরকারের পূর্ব অনুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক। দশম সংসদের প্রথম অধিবেশনেই আমরা এ সংশোধনী বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি। কোনো বিশেষ শ্রেণীর নাগরিকের জন্য দুর্নীতির অপরাধের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমতির নামে বিশেষ সুবিধা প্রদান যেমন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তেমনি রাষ্ট্রীয় খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধের সরকারি অঙ্গীকারের ষড়যন্ত্রমূলক বরখেলাপের শামিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অন্যায়ের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন এবং দুর্নীতিকে বরদাশত করা হবে না বলে ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর এ অবস্থান দুদকের জন্য প্রেরণামূলক। অন্যদিকে আমরা আশা করব যে, সরকারি ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মহল এ অবস্থানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেন যা দুদকের স্বাধীন ও কার্যকরভাবে কর্তব্য পালনে বাধা সৃষ্টি করে।’

অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির তদন্ত সফলভাবে সম্পাদনের জন্য তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে সমন্বয়ের আহ্বান জানান।

তিনি জানান, তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হলে হলফনামার মাধ্যমে নির্বাচনের পূর্বে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের সম্পদের হিসাব প্রকাশের যে বিধান করা হয়েছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় সম্পদের তথ্য প্রকাশের যে সংস্কৃতি বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে তার বাস্তব সুফল পাওয়া যাবে না। বরং এরূপ অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদাহরণ রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার হবে ও বিচারহীনতা বৃদ্ধি পাবে।

(দ্য রিপোর্ট/এএইচ/এসকে/জানুয়ারি ২৭,২০১৪)