পরিপত্রটি আইনগত, নীতিগত নয়!
জনপ্রতিনিধিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করানো যাবে না। শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সোমবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক পরিপত্রে বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও পদস্থ কর্মকর্তারা বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পরিদর্শনে গেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে শ্রেণী পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রেখে সংবর্ধনা প্রদান করা হচ্ছে। সংবর্ধনার এ সব অনুষ্ঠানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখার ফলে একদিকে যেমন বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, অপরদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর বিরূপ শারীরিক ও মানসিক চাপ পড়ছে। এতে সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয় বলেও পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষার সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে এ ধরনের কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
সরকারের এই বোধোদয় প্রশংসিত হবে বলে আমাদের ধারণা। যদি বিষয়টি সত্যিই শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থে করা হয়ে থাকে তাহলে এটাকে শুধু প্রাথমিক স্কুল পর্যায়ে না রেখে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত উন্নীত করা যেতে পারে।
তবে সরকারের জারি করা পরিপত্রে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের না নেওয়ার জন্য যে যুক্তি হাজির করা হয়েছে, তা অবশ্যই বিচার-বিশ্লেষণের দাবি রাখে। কারণ, এতকাল যে যুক্তিতে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সংবর্ধনায় শিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে রাখা হতো তার পেছনেও কিছু যৌক্তিক কারণ দেখানো হতো। সেটা হলো রাষ্ট্র বা সমাজের প্রতিষ্ঠিত মানুষের সঙ্গে কোমলমতি শিশুদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া, যাতে এই শিশুরাও বড় হওয়ার অনুপ্রেরণা পায়। এ ছাড়া একটি বিশেষ দিনে পরিপাটি পোশাকে সাজিয়ে শিশুদের হাতে ফুল দিয়ে যদি কোনো অতিথিকে বরণের আয়োজন করা হয়, নিশ্চয়ই দৃশ্য হিসেবে তা নয়নাভিরাম, যা মানুষের মনে প্রশান্তি সৃষ্টি করে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিশুরা না থাকায় আগামীতে এ ধরনের সুন্দর উপভোগ্য দৃশ্য আর দেখা যাবে না এবং আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা আগামীতে এ ধরনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের অনুপ্রেরণা, স্মৃতি ও শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত হবে।
আরেকটি বিষয় এখানে বলা দরকার, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বা ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষার্থীদের কোনো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাজির করে না বা করতে পারে না। এটা একান্তই প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তি এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের ইচ্ছায় ঘটে থাকে। যাদের বিরুদ্ধে পরিপত্রে শাস্তির ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে উপরিমহলের চাপ বন্ধ না হলে তারা অসহায়বোধ করতে পারেন। তাই এই পরিপত্র কার্যকর করতে হলে সরকারের উপরমহল থেকেই নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যেন তারা কোমলমতি শিশুদের সংবর্ধনা কেউ গ্রহণ না করেন। তাহলে কোনো পরিপত্র জারি অথবা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণার দরকারও পড়বে না।