বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : সম্প্রতি বাংলাদেশে ব্যাপক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য সরকারের স্বাধীন তদন্ত বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া উচিত বলে জানিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক সংস্থাটি।
সংস্থাটি আরও জানায়, পুলিশি হেফাজতে যাদের নেওয়া হচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া উচিত।
এইচআরডব্লিউ জানায়, পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজেপি) মিলে গঠিত যৌথবাহিনী বিরোধী দলের সমর্থকদের গ্রেফতার করেছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে ও পরে সহিংসতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। গ্রেফতারদের অনেকেই ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়েছেন বলে নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী জানিয়েছে। তবে এর আগেও ক্রসফায়ারের সমালোচনা করেছে এইচআরডব্লিউ।
এ ব্যাপারে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন, ‘বাংলাদেশে ক্রসফায়ারের নামে বিরোধী দলের সমর্থকদের হত্যার ভীতিকর নমুনা আমরা প্রত্যক্ষ করছি। বাংলাদেশ সরকারের উচিত নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনীকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা এবং এ সব হত্যার স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের নির্দেশ দেওয়া।’
এর আগে ২১ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, ‘যৌথবাহিনী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে।’
নির্বাচনের আগে ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের অনেকেই সাধারণ মানুষ। বিরোধী দল যানবাহনে আগুন দেওয়ার কারণে তাদের অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন।
এইচআরডব্লিউ আক্রান্তদের স্বজন ও পরিচিতজনদের সঙ্গে কথা বলে সম্প্রতি নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর হাতে এ সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ধরণ সম্পর্কে একটি পর্যালোচনা করছে।
এ সব হত্যাকাণ্ডের পর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশ জানিয়েছে, আক্রমণের শিকার হওয়ার পর তারা পাল্টা আক্রমণ করেছে।
এদিকে নিহতদের স্বজনদের দাবি নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনী গ্রেফতারের পর তাদের হত্যা করছে। হত্যার আগে তাদের নির্যাতনও করা হয়েছে বলে নিহতদের কয়েকজনের স্বজন দাবি করেছে।
এইচআরডব্লিউ সরকারের প্রতি নিরাপত্তা রক্ষীদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের মূলনীতি অনুসরণের নির্দেশ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের এই নীতির আওতায় নিরাপত্তা বাহিনীকে শক্তিপ্রয়োগ ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের আগে অহিংস উপায়ে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করার কথা বলা হয়েছে। আর যদি শক্তি প্রয়োগ ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ঠেকানো না যায় তাহলে যত সম্ভব কম হতাহতের বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে।
ব্রাড অ্যাডামস বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি মানবাধিকার সঙ্কটকে আরও জটিল করে তুলছে। নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর হাতে এ সব সন্দেহজনক হত্যার বিষয়টি সম্প্রতি দেখা যায়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বিরোধী দলে থাকতে তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের অভিযোগ এসেছিল। তবে এখন ক্ষমতায় থেকেও তারা এ সব বন্ধের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না।’
প্রধানমন্ত্রীর এখনই জনসম্মুখে বিবৃতি দিয়ে এ সব হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের নিন্দা জানানো উচিত ও নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীকে আইনের আওতায় আনা উচিত বলেও জানান ব্রাড অ্যাডামস।
(দ্য রিপোর্ট/কেএন/জেএম/শাহ/জানুয়ারি ২৮, ২০১৪)