ব্লগার রাজিব হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ব্লগার রাজিব হত্যা মামলায় আটজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় সিএমএম আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন ।
সিএমএম আদালতের ডেসপাস শাখার চার্জশিট গ্রহণকারী পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. মনিরুল হক ডাবলু জানান, চার্জশিটে ৮ জন আসামি ছাড়াও ৫৫ জন সাক্ষী এবং ৭৮ প্রকার আলামতের কথা উল্লেখ রয়েছে। বুধবার ওই চার্জশিট আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলেও জানান তিনি।
চার্জশিটের ৭ আসামি হলেন- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল বিন নাইম ওরফে দিপু (২২), মাকসুদুল হাসান অনিক (২৬), এহসানুর রেজা রুম্মান (২৩), মো. নাঈম সিকদার ওরফে ইরাদ (১৯), নাফির ইমতিয়াজ (২২), সাদমান ইয়াছির মাহমুদ (২০), মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানী ও রেদোয়ানুল আজাদ রানা (৩০)।
চার্জশিটভূক্ত আসামিদের মধ্যে রানা পলাতক ও অপর আসামিরা আটক আছেন এবং তারা আদালতে রাজিব হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবান্দি দিয়েছেন। তবে শুধু স্বীকারোক্তিতে রাহমানী নিজে জড়িত থাকার কথা স্বীকার না করলেও অপরাপর স্বীকারোক্তিকারী আসামিরা রাজিবকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল বলে উল্লেখ করায় তাকে আসামি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাসায় ফেরার পথে পল্লবীর কালশীর পলাশনগরে অজ্ঞাত আততায়ীর হাতে নিহত হন শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা রাজীব হায়দার শোভন।
আসামিদের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামাজ কক্ষে নামাজ পড়তে গিয়ে তারা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ হয়। সেই সময় বাংলাদেশ ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রানা তাদের জানায় জনৈক ব্লগার ‘থাবা বাবা’ইসলাম ও মহানবী (স.) এর নামে বাজে কথা লিখছে। তাকে হত্যা করতে হবে। না হলে ইসলাম ও ঈমান রক্ষা করা যাবে না। এভাবেই রানা তাদের রাজীবকে হত্যার জন্য উদ্ধুব্ধ করে। সে মোতাবেক থাবা বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। রাজীবকে হত্যার জন্য তারা দুটি গ্রুপ তৈরি করে। একটি ‘ইনটেল’ গ্রুপ ও অন্যটি ‘এক্সিকিউশন’ গ্রুপ। প্রত্যেক গ্রুপে ৩ জন করে ৬ জন সদস্য ছিলেন। ইনটেল গ্রুপ রাজীবের ব্লগে এবং ফেসবুকে ঢুকে ‘থাবা বাবা’ব্লগ থেকে রাজীবের ছবি সংগ্রহ করে। এরপর একদিন ‘ইনটেল গ্রুপ’শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে গিয়ে রাজিবকে শনাক্ত করে আসে।
এরপর ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা রাজীবকে রেকি করা শুরু করে ওইদিন ইনটেল গ্রুপের দুই সদস্য রাজীবের সঙ্গে বাসে ওঠে। অপর একজন সাইকেলে রাজীবকে অনুসরণ করে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত যায় এবং রাজীবের বাসা চিনে আসে।
রাজীবের বাসা চিহ্নিত করার পর ইনটেল গ্রুপের সদস্যরা তাকে নিয়মিত রেকি করা শুরু করে। এ সময় তারা রাজীবকে হত্যার জন্য ঢাকার নদ্দা থেকে চাপাতি-ছুরি ও নতুন মোবাইলের সিম ও সেট কেনে।
ঘটনার দিন এক্সিকিউশন গ্রুপের সদস্যরা বিকেল ৪টার দিকে পল্লবীর পলাশনগরে রাজীবদের বাসার গলিতে অবস্থান নেয় এবং স্কুল ব্যাগ, ক্রিকেটের ব্যাট ও বল ইত্যাদি সঙ্গে রাখে।
ক্রিকেট খেলার নামে তারা বল ইচ্ছাকৃত রাজীবদের বাসায় ফেলে দেয় এবং বল আনার নাম করে পুনরায় নিশ্চিত হয় সেটি রাজীবের বাসা কী না। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে পৌনে আটটার দিকে রাজীব যখন পল্লবীর বাসার দিকে যাচ্ছিলেন তখন ইনটেল গ্রুপের সদস্যরা তাকে অনুসরণ করে। বাসার গেটের কাছাকাছি পৌঁছার পর এক্সিকিউশন গ্রুপের রানা তাকে রিকশা থেকে ধাক্কা দেয় এবং ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দিপু চাপাতি দিয়ে গলা থেকে মাথা আলাদা করার জন্য কোপ দেয়। কোপে রাজীব মারাত্মক আহত হয়ে চিৎকার দিয়ে দেয়ালের ওপর পড়ে যান। তারপর ফয়সাল রাজীবকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।
আসামি অনিকও তার হাতে থাকা ছোরা দিয়ে এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। ওই সময় কেউ একজন খুন খুন বলে চিৎকার করে এগিয়ে আসতে দেখে খুনিরা পালিয়ে যায়।
রাজীবকে হত্যা করার সময় আসামি দীপের এলোপাতাড়ি কোপের একটি কোপ অনিকের পায়ের জুতায় লাগে। এতে তার পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের কিছু অংশ কেটে যায়। তাই যাওয়ার সময় অনিক রুম্মানের সঙ্গে কাকরাইল এলাকায় জুতা জোড়া খুলে জাতীয় চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদফতরের পুকুর পাড়ে ফেলে যায়।
(দ্য রিপোর্ট/জেএ/এনডিএস/এপি/জানুয়ারি ২৮, ২০১৪)