দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন বুধবার পূর্বঘোষিত কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি সফল করতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে বিএনপি।

কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচির অনুমতি না দিলে বিএনপি ও ১৯ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও পাড়ায়-পাড়ায় সরকারকে কালো পতাকা প্রদর্শন করবে বলেও ঘোষণা করেছে বিএনপি।

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সহযোগিতা চান দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও দফতরের দায়িত্বপালনকারী ড. আসাদুজ্জামান রিপন।

বিকাল ৫টায় সংবাদ সম্মেলনের সময় নির্ধারণ থাকলেও তা শুরু হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে। দেরিতে সংবাদ সম্মেলনের ‘কৈফিয়ত’ দিয়ে রিপন বলেন, ‘আপনারা জানেন এই জনবিচ্ছিন্ন সরকার বারবার আমাদের দলীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখে। আজও তারা সে রকম বৈরী পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। পুলিশি ব্যারিকেডের কারণে আমরা আমাদের কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারছিলাম না। সে কারণে আমাদের সংবাদ সম্মেলন দেরি করতে হয়েছে।’

ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘ভোটারবিহীন তামাশাপূর্ণ, অপর্যবেক্ষণযোগ্য প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে আগামীকাল (বুধবার) সংসদ অধিবেশন বসতে যাচ্ছে। ৩৮ বছর পর একই দলের হাতে গণতন্ত্র আবারও হত্যা করা হল। আমরা আগেই সরকারের এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি।’

তিনি বলেন, ‘জনগণের কাছে অগ্রহণযোগ্য এই সংসদ বসার দিন আমরা পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ কালো পতাকা মিছিল করবো। কিন্তু এই অবৈধ সরকার এখনও আমাদের কর্মসূচির অনুমতি দেয়নি। আমরা আশা করবো সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা আমাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত না করে সহযোগিতা করবে।’

ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রিপন বলেন, ‘সরকার বিরোধী দলের কোনও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না। তারা র‌্যাব-পুলিশ ও যৌথবাহিনী দিয়ে বিরোধী নেতাকর্মীদের নিয়মিত হত্যা করছে। এখন অনুগত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সরকারি দলের সন্ত্রাসী ক্যাডাররা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করছে। আজও (মঙ্গলবার) পাবনায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা যুবদলের নেতাকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এর মাধ্যমে সরকার দেশকে একটি পুলিশি ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’

তিনি বলেন, ‘অবৈধ নির্বাচনের কোনও নৈতিক ভিত্তি নেই। অথচ সরকারের লোকেরা ১৮৮৫ দিন ক্ষমতায় থাকার দিবাস্বপ্ন দেখছে।’

বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করেন, ‘বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুকে সামাজিকভাবে অপরাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হেয় করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। তিনি দেশের নৌ-বাহিনীর সাবেক প্রধানের স্ত্রী। ‘সুরভী’ নামে তার একটি সাহায্য সংস্থা আছে। যেখানে গরিব, অসহায় শিশু ও নারীদের সাহায্য করা হয়। বিএনপি সরকারের এই ঘৃণ্য, হীন কৌশলের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ায় তারেক রহমান আদালতের মাধ্যমে খালাস পেলেও বিচারকের বিরুদ্ধে সরকার দুদককে লেলিয়ে দিয়েছে। তিনি জীবন বাঁচাতে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। তার স্টেনো, পুলিশের কনস্টেবল ও ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি করছে। তারেক রহমান খালাস পেয়েছেন, এটাই সরকারের মাথাব্যথার মূল কারণ।’

রিপন আরও বলেন, ‘টিআইবি গত সরকারের মন্ত্রী ও এমপিদের দুর্নীতির মাধ্যমে পাহাড়সম অবৈধ সম্পদের যে তথ্য দিয়েছে, তা তাদের দুর্নীতির কিয়দংশ। আমরা টিআইবির ওই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে অবিলম্বে দুদককে তদন্তের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দাবি করছি ও তাদের অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিয়ে জনগণের মধ্যে বন্টনের দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি সোমবার কিশোরগঞ্জে সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির ব্যাপারে তথ্য দিয়ে বলেন, ‘১৬ কোটি টাকার ওই ডাকাতির সঙ্গে সরকার দলীয় যুবলীগের লোকেরা জড়িত। র‌্যাব তাদের আজকে ৫ বস্তা টাকাসহ ধরেছে। ১৯৭৫ সালেও আওয়ামী লীগের লোকেরা এভাবে ব্যাংক ডাকাতি করতো।’

(দ্য রিপোর্ট/টিএস/এমএআর/ এনআই/জানুয়ারি ২৮, ২০১৪)