হাইকোর্টে মামলার জট বাড়ছেই
দ্য রিপোর্ট টুয়েনটিফোর ডটকম একজন ভুক্তভোগীর দুর্ভোগের চিত্র বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছে, একটি দেওয়ানী মামলার নিষ্পত্তি হয়নি ৫২ বছরেও। মেহেরপুরের গাংনীর রাজু আহমেদ বলেছেন, ১৯৬২ সালে তার দাদা তাদের জমি নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে মামলায় জড়িয়ে পড়েন। তিন পুরুষ চলে গেলেও ওই মামলাটি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। মহামান্য হাইকোর্টে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
রাজু আহমেদের এই ভোগান্তির বর্ণনার পাশাপাশি হাইকোর্টে জমে থাকা মামলার একটি চিত্র দ্য রিপোর্টের সোমবারের প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে। এতে দেখা যায়, হাইকোর্টে বর্তমানে বিচারাধীন আছে প্রায় সোয়া ৩ লাখ মামলা। নতুন আর কোনো মামলা না এলেও এ সব মামলা নিষ্পত্তি হতে লাগবে ১৫ বছরেরও বেশি সময়। তবে বর্তমান হিসাবে এ ১৫ বছরের মধ্যে নতুন করে যোগ হবে আরও প্রায় আট লাখ মামলা। বর্তমান হারে তা নিষ্পত্তি হতে সময় লাগবে আরও ৩৭ বছর। ওই সময়ে নতুন মামলা জমবে আরও সোয়া ১৯ লাখ। একই হারে এ সব মামলা নিষ্পত্তিতে লাগবে আরও ৯১ বছর। এমনিভাবেই মামলার জটে নিষ্পেষিত হচ্ছে হাইকোর্ট।
বর্তমানে বিচারাধীন ৩ লাখ ২৫ হাজার ৫৭১টি মামলার পাশাপাশি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মিলে প্রতিবছর হাইকোর্ট বিভাগে ৫২ হাজারেরও বেশি নতুন মামলা আসছে। অপরদিকে নিষ্পত্তি হচ্ছে ২১ হাজার। ফলে বছর শেষে ৩০ হাজারেরও বেশি মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় থেকে যাচ্ছে।
সংবাদ অনুযায়ী বিচারের প্রক্রিয়া এভাবে চলতে থাকলে মামলার জট ক্রমান্বয়ে হাইকোর্টকে স্থবির করে তুলবে বলেই মনে হচ্ছে। বিচার ব্যবস্থা নিয়ে, ন্যায় বিচার নিয়ে নানা মনীষীর নানামত আমরা জানতে পারি। মামলার শিকার অথবা বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগের কথাও মিডিয়ার বদান্যতায় মানুষ জানতে পারে। তবে, এর কোনোটিই শেষ পর্যন্ত মানুষের উপকারে আসে না।
নতুন আইনমন্ত্রী দায়িত্ব নেবার পর মামলার জট থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য উদ্যোগের কথা বলেছেন। অতীতে যারা এই দফতরের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন তারাও এ ধরনের আশাবাদ দিয়েই কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাতে কোনো ফলাফল মিলেছে তার নমুনা মেলে না। এত ঢাকঢোল পিটিয়ে গত জরুরি সরকার বিচার বিভাগ পৃথক করে মানুষকে ভোগান্তি থেকে মুক্তির যে আশ্বাস দিয়েছিলেন তাও সেই তিমিরেই মিলিয়ে গেছে। এর কোনো উদ্যোগই যদি ফলপ্রসূ হতো তাহলে বক্ষ্যমান প্রতিবেদনে তার প্রমাণ মিলত।
আমরা মনে করি, দ্রুত এবং ন্যায় বিচার পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার যাতে বাস্তবায়ন হয় তার জন্য বর্তমান বিচার ব্যবস্থায় মৌলিক এবং বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা দরকার। সে ব্যাপারে বিভিন্ন স্তর থেকে মানুষের মতামত নেওয়া প্রয়োজন। বিচার বিভাগকে সহযোগিতা করার জন্য সালিশী ব্যবস্থাকে জোরদার এবং যুগোপযোগী করা যেতে পারে। তাছাড়া প্রতিটি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সঙ্গেও বিচারিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলে বিচার ব্যবস্থায় গতির সঞ্চার হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।