দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের এক গবেষণায় দেখা গেছে, শস্য ক্ষেতে ব্যবহৃত কীটনাশক ডিডিটি মানব মস্তিষ্কের আলঝেইমার রোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকতে পারে।

‘জেএএমএ নিউরোলজি’তে প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে জানা যায়, আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় চারগুণ বেশি পরিমাণ ডিডিটি কীটনাশকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। অনেক দেশেই এই কীটনাশক এখনও ম্যালেরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়।

তবে ‘আলঝেইমারস রিসার্চ ইউ’কে জানায়, মস্তিষ্কের কোষ ক্ষয়জনিত রোগে ডিডিটির কোন ভূমিকা রয়েছে কী না তা নিশ্চিত করে বলার জন্য এখনও আরও অনেক তথ্য-প্রমাণের দরকার রয়েছে।

ডিডিটি খুবই কার্যকরী একটি কীটনাশক। কীটনাশকটি সর্বপ্রথম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে ম্যালেরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়। এরপর বাণিজ্যিকভাবে কৃষি কাজেও এর ব্যবহার শুরু হয়।

১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশেই কীটনাশকটি নিষিদ্ধ করা হয়। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এখনও ম্যালেরিয়া দমনে এই কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকে।

তবে গবেষণার ফলাফল এখনও পুরোপুরি পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করতে পারেনি যে আলঝেইমার রোগ সৃষ্টিতে ডিডিটির সরাসরি কোনও ভূমিকা রয়েছে কী না। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত নন এমন অনেক মানুষের শরীরেও এ রোগে আক্রান্ত মানুষের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ ডিডিটির উপস্থিতি রয়েছে। এ ছাড়া ডিডিটি কীটনাশক ব্যবহার শুরু হওয়ারও অনেক আগে মানব মস্তিষ্কের আলঝেইমার রোগের উৎপত্তি হয়েছে।

গবেষকরা মনে করেন, এই রাসায়নিক পদার্থটি আলঝেইমার রোগের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়া এটি মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যুতে সরাসরি ভূমিকা রাখে এমন একটি ক্ষতিকর প্রোটিন উৎপাদনেও সহায়তা করে থাকতে পারে। এটি আলঝেইমার রোগের প্রধান কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার জর্জিয়ায় অবস্থিত এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলঝেইমার রোগ গবেষণা কেন্দ্রের প্রফেসর এলান লেভি বলেন, ‘আলঝেইমার রোগের শক্তিশালী পরিবেশগত ঝুঁকি শনাক্তে এটি প্রথম পর্যায়ের গবেষণা।’

তিনি আরও জানান, ‘ওই গবেষণায় দেখা গেছে, আলঝেইমার রোগ সৃষ্টিতে এই উপাদানটির ব্যাপক ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। আলঝেইমার রোগ সৃষ্টির শুরুর দিককার শেষ পর্যায়ে জিনগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ যে উপাদানটি এ রোগটিকে বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কাজ করে এটিও সেরকম ভূমিকা রাখতে পারে।’
তবে, যুক্তরাজ্যের দাতব্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘আলঝেইমারস রিসার্চ ইউকে’র গবেষণা প্রধান ড. সিমন রিডলি বলেন, ‘এই রোগ সৃষ্টিতে এই বিশেষ কীটনাশকটির কোনও ভূমিকা আছে কী না তা নিশ্চিত করতে আরও অনেক গবেষণা দরকার আছে।’ (সূত্র: বিবিসি)

(দ্য রিপোর্ট/এমএটি/এপি/এমএআর/এসবি/জানুয়ারি ২৯, ২০১৪)