দুর্বল মৌলভিত্তির দৌরাত্বে হোঁচট খাচ্ছে স্থিতিশীলতা
ঢাকা, সেপ্টম্বর০৯: নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বাজারে গত প্রায় আড়াইমাস ধরে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসলেও দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারের দৌরাত্ব বেড়ে যাওয়ায় বাজারের স্থিতিশীলতা স্থায়ী হচ্ছে না। যেসব কোম্পানির মৌলভিত্তি দুর্বল, শেয়ার সংখ্যা কম, আয় কম এবং ডিভিডেন্ডের রেকর্ড ভালো নয়, সেসব শেয়ার দর ক্রমেই বাড়তে থাকায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এতে করে বাজারের স্বাভাবিক গতি বার বার নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, হাক্কানী পাল্প, শমরিতা হাসপাতাল, দেশ গার্মেন্টস, মুন্নু সিরামিক, জুট স্পিনার্স, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ন্যাশনাল পলিমার, বিডি অটোকারস, মডার্ন ডাইং, লিগ্যাসী ফুটওয়্যার, মিরাকল ইন্ডাষ্ট্রিজ, রহিমা ফুড, মুন্নু জুট স্টাফলারস, দেশবন্ধু পলিমার, ইমাম বাটন, লিবরা ইনফিউশন, রহিম টেক্সটাইল, আরামিট সিমেন্ট, বিডি থাই এলুমিনিয়াম, জিমিনি সী ফুড, আলহাজ্জ্ব টেক্সটাইল এবং সোনালী আঁশের শেয়ার দর অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে।
সার্বিক বাজারে নি�œমুখী প্রবনতা বিরাজ করলেও দুর্বল মৌলভিত্তির ১৮টি কোম্পানির শেয়ার সোমবার সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে। এরমধ্যে অধিকাংশ শেয়ার বিক্রেতাশুন্য হয়ে পড়ে।
জানা যায়, অধিকাংশ কোম্পানির অনুমোদিত এবং পরিশোধিত মূলধন কম, শেয়ার সংখ্যার অধিকাংশই উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর শেয়ার কম থাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে এসব শেয়ারের দর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। ফলে উদ্যোক্তা পরিচালক এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা খুব সহজে দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারগুলো নিজেদের মধ্যে লেনদেনের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে দর বৃদ্ধি করতে পারে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
তাদের মতে, মন্দা বাজারে দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোর দর বৃদ্ধি পাওয়া এবং ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোর দর কমে যাওয়া স্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ নয়। আর এ ধরণের শেয়ারগুলোর দর বৃদ্ধি পেলে বাজারের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয়। তাই এসব শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দুর্বল মৌলভিত্তির এসব নন-মার্জিন শেয়ারের লেনদেন খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজের বিরুদ্ধে মার্জিন ঋণ নীতিমালা লংঘন করে ঋণ দেয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।
সোমবার দিনশেষে দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে হাক্কানি পাল্প অ্যান্ড পেপারের। এ শেয়ারের দর ২.৭ টাকা বা ১০ শতাংশ বেড়ে শেয়ারটি হল্টট্রেড হয়ে যায়। এরপরের অবস্থানে রয়েছে শমরিতা হাসপাতাল। এ শেয়ারের দর বেড়েছে ১২.১ টাকা বা ৯.৯৯ শতাংশ। এরপর যথাক্রমে দেশ গার্মেন্টেসের শেয়ার ৪.৩ টাকা বা ৯.৯৮ শতাংশ, মন্নু সিরামিকের শেয়ার ৩.৬ টাকা বা ৯.৯৭ শতাংশ, মিথুন নিটিংয়ের শেয়ার ১১.৪ টাকা বা ৯.৯৬ শতাংশ, দেশবন্ধু পলিমারের শেয়ার ২.২ টাকা বা ৯.৯৫ শতাংশ, সোনালী আঁশের শেয়ার ১৪.৯ টাকা বা ৯.৯৫ শতাংশ, এপেক্স স্পিনিং অ্যান্ড নিটিং মিলসের শেয়ার ৭.৩ টাকা বা ৯.৯২ শতাংশ, জুট স্পিনার্সের শেয়ার ৯.২ টাকা বা ৯.৯১ শতাংশ, সিনোবাংলা ইন্ডাষ্ট্রিজের শেয়ার ২ টাকা বা ৯.৯০ শতাংশ, আরামিট সিমেন্টের শেয়ার ৭.৭ টাকা বা ৯.৯০ শতাংশ, আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের শেয়ার ১.৯ টাকা বা ৯.৯০ শতাংশ, অরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার ৪.৫ টাকা বা ৯.৮৯ শতাংশ, ন্যাশনাল পলিমারের শেয়ার ৬.২ টাকা বা ৯.৮৯ শতাংশ, বিডি অটোকারসের শেয়ার ২.৬ টাকা বা ৯.৮৯ শতাংশ, মডার্ন ডাইং অ্যান্ড স্ক্রিনিং প্রিন্টিংয়ের শেয়ার ৮ টাকা বা ৯.৮৮ শতাংশ, এইচআর টেক্সটাইলের শেয়ার ৩.২ টাকা বা ৯.৮৫ শতাংশ, জেমিনি সী ফুডের শেয়ার ১৬.৪ টাকা বা ৯.৮১ শতাংশ, মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের শেয়ার ০.৭ টাকা বা ৯.৭২ শতাংশ, লিগ্যাসী ফুটওয়্যারের শেয়ার ১.৯ টাকা বা ৯.৬৯ শতাংশ, রহিমা ফুডের শেয়ার ১.৯ টাকা বা ৯.৬৪ শতাংশ, আলহাজ্জ্ব টেক্সটাইলের শেয়ার ৭.৩ টাকা বা ৯.৫৮ শতাংশ, ইমাম বাটনের শেয়ার ০.৮ টাকা বা ৯.৫২ শতাংশ, মিরাকল ইন্ডাষ্ট্রিজের শেয়ার ১.৩ টাকা বা ৯.৪২ শতাংশ এবং জেএমআই সিরিঞ্জের শেয়ার দর ১৭.৫ টাকা বা ৯.৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অধিক মুনাফার আশায় কোনো চক্র এসব শেয়ারের দর বাড়িয়ে নিচ্ছে। কাক্সিক্ষত দরে চলে আসলে চক্রটি এসব শেয়ার থেকে বেরিয়ে যাবে। তাই এখন যারা উচ্চদরে শেয়ারটি কিনছেন তাদের পুঁজি যে কোনো সময় আটকে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, গত ২৭ আগস্ট সিভিও পেট্রোক্যামিকেল, মিথুন নিটিং, তাল্লু স্পিনিং এবং বঙ্গজের শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানের ঘোষণা দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এজন্য দুই সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করে বিএসইসি। কিন্তু এ ব্যাপারে আর কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত না হওয়ায় কারসাজিকারীরা তাদের অপকৌশল অব্যাহত রেখেছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে