বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হলেও জাতীয় কবি হিসেবে কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি দীর্ঘ ৩৭ বছরে। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পুরস্কারে কবিকে ভূষিত করা হলেও জাতীয় কবি হিসেবে শুধুমাত্র বই-পুস্তক ও মৌখিক স্বীকৃতিই রয়েছে।

নজরুল ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য মন্ত্রিপরিষদের একটি বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হয়। কিন্তু তা কত সালে তাও ঠিকঠাক বলতে পারছেন না ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা।

নজরুল ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানান, তারা নতুন করে সরকারের কাছে বিষয়টি আবারও প্রস্তাব করবেন।

এদিকে কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি এমন বিষয় অবগত নয় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এ ব্যাপারে কথা হলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘কাজী নজরুলকে জাতীয় কবি হিসেবে রাষ্ট্রীয় কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি বলে আপনি (প্রতিবেদক) যে তথ্যটি দিচ্ছেন সেটা যে ভুল তা আমি বলছি না। আমাকে একটু এ বিষয় খোঁজ নিতে হবে। বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি এটা সত্য হয় তাহলে মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত প্রজ্ঞাপনের ব্যবস্থা করা হবে। বিষয়টি আমাকে জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।’

নজরুল গবেষকরা মনে করছেন, কোনো এক অজানা রহস্যের কারণে কোনো সরকারই প্রজ্ঞাপনটি জারি করেনি। এদিকে জাতীয় কবি হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ব্যাপারে দীর্ঘদিনেও মাথাব্যথা নেই কারও। অনেকেই জানেন না, এখনও পর্যন্ত কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রজ্ঞাপনই প্রধান কথা নয়। কবিকে যে দেশ ও জাতি গভীরভাবে শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে এটাই যথেষ্ট।

এ ব্যাপারে নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক রশীদ হায়দার বলেন, একজন মানুষকে সম্মানিত করতে সরকারি গেজেট প্রকাশ জরুরি নয়। দেখতে হবে কবি নজরুলকে দেশ, জাতি কতটুকু ভালোবাসে। তাছাড়া কবি নজরুলকে জাতীয় কবি হিসেবে না মানার একজনকেও পাওয়া যাবে না। তাই প্রজ্ঞাপন কেন জারি হলো না এটা এখন কোনো আলোচনার বিষয় হতে পারে না।

এ প্রসঙ্গে নজরুল ইনস্টিটিউটের সচিব ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, ঠিক বলতে পারছি না কোনো সরকারের আমলে নজরুলকে জাতীয় কবি হিসেবে একটি প্রস্তাব কেবিনেটে অনুমোদন করা হয়েছিল। সম্ভবত এরশাদ সাহেবের আমলেই প্রস্তাবটি অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি এ ব্যাপারে।

তিনি বলেন, তবে আমরা আবারও মন্ত্রণালয়ে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। আমরা সংস্কৃতিমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে নতুন করে এ বিষয়ে কথা বলেছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই কিছু একটা করা যাবে।


দীর্ঘদিনে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি না করার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, আসলে প্রজ্ঞাপনের প্রয়োজনীয়তা ছিল না। প্রজ্ঞাপন জারি না হলেও তো আমরা নজরুলকে জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছি এবং সবাই তা মেনেও নিয়েছেন। কারও কোনো মতপার্থক্য দেখি না।

প্রজ্ঞাপন জারি না হলে কবিকে নিয়ে অবমাননাকর কিছু ঘটলে তা আইনি প্রক্রিয়ার অধীনে এনে সমাধান করা যাবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা সত্য কথা যে যদি কখনও কবিকে নিয়ে কোনো প্রকার অবমাননাকর কিছু ঘটে তাহলে প্রজ্ঞাপন থাকলে বিষয়টি বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধান করা যাবে। কিন্তু আসলে কবিকে সবাই ভালোবাসেন, কেউই কবির অবমাননা মেনে নিবে না বা কবিকে অবমাননা করে এমন কিছু করবে না এটা সবার বিশ্বাস। তবুও বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখা প্রয়োজন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নজরুল ইনস্টিটিউটের একজন কর্মকর্তা বলেন, নজরুলকে জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে ইনস্টিটিউটের কিছুই করার নেই। কারণ এ বিষয়টিতে উদাসীন মূলত সরকার। সরকারি উদ্যোগ ছাড়া এটা সম্ভব নয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গুণীজন ও নজরুল গবেষক বিষয়টি সরকারের কাছে জানালেও সরকার বিষয়টি কর্ণপাত করেনি।

(দ্য রিপোর্ট/এইচআর/এনআই/ এমডি/জানুয়ারি ২৯,২০১৪)