সাইফুল ইসলাম শিল্পী, চট্টগ্রাম : কেন্দ্র দখল, প্রার্থীর ওপর হামলা ও বিভিন্ন কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার নানান অভিযোগের মধ্যেই চট্টগ্রামে ১০ পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে।

বুধবার সকাল ৮টায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট শুরু হলেও এক ঘণ্টার মাথায় বিভিন্ন অপ্রীতিকর খবর আসে জেলার সীতাকুণ্ড ও চন্দনাইশসহ কয়েকটি পৌরসভা থেকে।

পৌর এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থতিতে কেন্দ্র দখলের অভিযোগ উঠেছে চন্দনাইশে। সেখানে দুটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে প্রশাসন। কেন্দ্র দুটি হলো- আসলাতুন চৌধুরী ফোরকানিয়া মাদ্রাসা ও গাছবাড়িয়া এ এন জে উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র।

চন্দনাইশ পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও ইউএনও সঞ্জিতা শরমিন দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সকালের ভোট শুরুর পর পরই দুর্বৃত্তরা আসলাতুন চৌধুরী ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ঢুকে কেন্দ্র দখলে নিয়ে ব্যালটে সিল মারা শুরু করে। এ সময় তারা এক হাজারেরও বেশি ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মেরেছে। একই সময়ে গাছবাড়িয়া এ এন জে উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সিল মারার ঘটনা ঘটেছে।

নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে এ অভিযোগ আসার পর তার নির্দেশে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে ভোট শুরুর ৪৫ মিনিটের মাথায় সীতাকুণ্ডের পন্থিশীলা কেন্দ্রে সরকারি দলের প্রার্থীর সমর্থকরা বিএনপি প্রার্থীর ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিএনপির প্রার্থী আবুল মনছুর সাংবাদিকদের জানান, ভোটকেন্দ্রে তাকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করা হয়েছে।

‘ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনকালে আওয়ামী লীগের লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে আমার ওপর হামলা চালায়। তারা আমাকে মাঠিতে ফেলে বাঁশ দিয়ে পিটাতে থাকে। পরে ভোট দিতে আসা মহিলারা এগিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার করেছে’, অভিযোগ করেন তিনি।

পন্থিছিলা, নুনাছড়াসহ চারটি কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের নৌকার এজেন্টরা জোর করে বের করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার নাজমুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে জানান, আবুল মনছুর তার ওপরে হামলার ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সীতাকুণ্ডের ১নং ওয়ার্ড নুনেছড়া ভোটকেন্দ্রে জোরপূর্বক কেন্দ্র দখল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং আকবর হোসেন নামে এক কমিশনার প্রার্থীর ভাইয়ের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে।

এ ছাড়া পন্থিশীলা ২নং ওয়ার্ড কেন্দ্রে জাপা প্রার্থী নূরুন নবী সাংবাদিকদের অভিযোগ করেছেন যে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা এ কেন্দ্রে ভোটারদের যেতে বাধা দিচ্ছে।

রাউজানে বিএনপির মেয়র প্রার্থী কাজী আবদুল্লাহ আল হাছানের অভিযোগ, তার এলাকায় ১৯টি কেন্দ্রে এজেন্টদের বের করে দিয়ে প্রতিপক্ষ নৌকার সমর্থকরা কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে।

এ কারণে তিনি নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান।

বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল হাছান দ্য রিপোর্টকে জানান, সকাল থেকে গহিরা থেকে রাউজান সদর পর্যন্ত ১১টি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করে কোথাও তার এজেন্টকে পাওয়া যায়নি।

‘খবর নিয়ে জানলাম ১৯টি কেন্দ্রেই ধানের শীষের এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে। সবাইকে সরকারদলীয় প্রার্থীর লোকজন জোর করে বের করে দিয়েছে। লাইন আছে তবে সেখানে ভোটার নাই, সবাই বহিরাগত লোকজন,’ অভিযোগ করেন তিনি।

তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেবাশীষ পালিত দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে ১০টি পৌরসভার সার্বিক পরিস্থিতির ব্যাপারে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল বাতেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। দুই একটি কেন্দ্রে কিছুটা গোলমালের খবর আমরা পেয়েছি। সে ব্যাপারে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’

(দ্য রিপোর্ট/এএসটি/এইচ/ডিসেম্বর ৩০, ২০১৫)