বিসিবির উৎকণ্ঠা কাটেনি; বরং...
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রেলিগেশন না থাকায় বড় বাঁচা বেঁচে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। আপাতত এই স্বস্তি নিয়ে থাকতে পারে বিসিবি। কারণ দ্বি-স্তর বিশিষ্ট টেস্ট ফরমেট প্রবর্তন করতে পারেনি আইসিসি। ‘বিগ থ্রি’র সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে হয়নি ভোটাভুটিও। তবে সব ক্ষমতাই এখন কুক্ষিগত ‘বিগ থ্রি’র। অনেকটা লোক দেখানো সংস্কার ও সংশোধনী এনে ভারতীয় বোর্ড (বিসিসিআই), ইংল্যান্ড বোর্ড (ইসিসি) এবং অস্ট্রেলিয়া বোর্ড (সিএ) ‘তাল গাছ আমার’ ভিতের উপর যে প্রস্তাব আইসিসির সভায় পাস করিয়েছে, তাতে মূলত ‘বিগ থ্রি’র আর্থিক মুনাফা এবং প্রশাসনিক কাঠামোতে নিরষ্কুশ খবরদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। সেখানেই স্বস্তির অনাবিল আনন্দে জেগে উঠেছে উৎকণ্ঠার কালো মেঘ।
বিসিসিআই, ইসিবি এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে নির্বাহী কমিটি এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল অ্যাফেয়ার্স কমিটি- এই ৫ সদস্য এ বছরের জুন থেকে আইসিসি পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে। আইসিসির ইভেন্টসমূহের ভবিষ্যৎ কমার্শিয়াল স্বত্ব টেন্ডারের মাধ্যমে ওই কমিটি নির্ধারণ করবে। আইসিসির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দায়িত্ব নিয়েছে বিসিসিআই। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বাদ পড়ছে না, প্রতি ৪ বছরে আইসিসি ৩টি প্রধান টুর্নামেন্ট পরিচালনা করবে। টেস্ট ক্রিকেট থেকে অর্জিত রাজস্ব বণ্টন নীতিমালায়ও এই ৩টি বোর্ডের জন্য বরাদ্দ থাকছে সিংহভাগ অর্থ। অবশিষ্ট অর্থের একটা অংশ সমভাবে বণ্টিত হবে অন্য ৭ টেস্ট প্লেয়িং দলের বোর্ডের মধ্যে। তবে টেস্ট থেকে অর্জিত আয় থেকে সহযোগী সদস্যদের মধ্যে বরাদ্দের হার বর্ধিত করায় ৭টি টেস্ট প্লেয়িং দেশের বোর্ড আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
প্রতি ৪ বছরে আইসিসির ৩টি মেগা ইভেন্ট আয়োজন, তাও ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের পছন্দ-অপছন্দের ওপর নির্ভর করছে। শুধু তাই নয়, আইসিসি ঘোষিত চলমান এফটিপির মেয়াদ ২০২০ সাল পর্যন্ত বহাল থাকার কথা থাকলেও এ বছরই শেষ হয়ে যাচ্ছে ওই এফটিপি। তার পরিবর্তে সমঝোতার ভিত্তিতে ২০১৫-২০২৩ সাল পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আয়োজন করার এখতিয়ার নিশ্চিত করা হয়েছে স্ব স্ব বোর্ডের।
এমনিতেই আইপিএল’র জন্য শ্লট নির্ধারিত, তার উপর ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের খেয়াল খুশিমত দ্বিপাক্ষিক সিরিজ, টুর্নামেন্ট হলে অন্য ৭টি টেস্ট দলের জন্য সুবিধাজনক শ্লট বের করা কঠিন হয়ে পড়বে। আর ‘বিগ থ্রি’র কাউকে না পেলে এই ৭টি দলের সিরিজে প্রচার স্বত্ব এবং বাণিজ্যিকীকরণ থেকে প্রত্যাশিত আয় নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। আইসিসির এফটিপি অনুযায়ী ২০১২-২০২০ সাল পর্যন্ত ৪৮টি টেস্ট খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের। সূচি অনুযায়ী এখনও অবশিষ্ট ৩৪টি টেস্ট। সেখানে প্রস্তাবের বিরোধিতা করায় ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ায়ই স্বাভাবিক। ভারতের সঙ্গে একটি হোম সিরিজ খেলে যে পরিমাণ আয় হত, তা দিয়ে বিসিবির সকল ক্রিকেট কর্মকাণ্ড অন্তত ২ বছর পরিচালনার সুযোগ ছিল।
আইসিসির মেগা ইভেন্ট থেকে আয়কৃত অর্থ সমবণ্টন হওয়ায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি না খেলেও ভারত, অস্ট্রেলিয়ার সমপরিমাণ অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। এখন থেকে আইসিসির প্রতিটি মেগা ইভেন্টে ‘বিগ থ্রি’র বরাদ্দ বেড়ে যাওয়ায় বিসিবির আয়ের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কলকাতার বহুল প্রচারিত দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় বলা হয়েছে- ‘দুপুরে আইসিসির প্রস্তাবের বিরুদ্ধে লিখিত প্রতিবাদ জমা দিয়েছে বিসিবি। তখন আইসিসিতে ২টি পক্ষ প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। ’পিসিবির কারণে রোটেশন পদ্ধতি বহাল থাকায় আইসিসির সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন বিসিবির সাবেক সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল। ঝুঁকির মুখে বাংলাদেশ আবারও পাশে পেয়েছে সেই পিসিবিকে।
‘বিগ থ্রি’র প্রস্তাবে সমর্থনের বিপরীতে ১৫ মিলিয়ন ডলার আয়ের নিশ্চয়তা পেয়েছে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট। খসড়া প্রস্তাবের সমর্থক হওয়ার পেছনে কারণ ওটাই। নিউজিল্যান্ড সবার আগে ‘বিগ থ্রি’কে সমর্থন দিয়ে আগামী ১০ বছর ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য ম্যাচ খেলে কাড়িকাড়ি অর্থ আয়ের নিশ্চয়তা পেয়েছে। এনডিটিভি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাতকারে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি মার্ক স্লেডেন জানিয়েছেন, ‘৭০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার আয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের সঙ্গে আমরা যথেষ্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পাব। সে প্রতিশ্রুতি পেয়েছি।’
পিসিবি চেয়ারম্যান জাকা আশরাফ শুধু কথা রেখেছেন। তবে দুবাই সভাই কিন্তু শেষ নয়, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠেয় আইসিসির সভায় ধাক্কা দিতে পারে ‘বিগ থ্রি’ সে শঙ্কা কিন্তু এখনও কাটেনি। খসড়া সংস্কার প্রস্তাব ফাঁস হওয়ায় প্রস্তাবনার বিপক্ষে তৈরি হয়েছে ব্যাপক জনমত, বিরোধিতার প্লাটফর্ম তৈরি হয়েছে। আইসিরি সভাপতি অ্যালান আইজ্যাক সে অপ্রিয় সত্য কথা উচ্চারণ করেছেন। তবে কষ্টে অর্জিত টেস্ট মর্যাদা এখনও টিকে আছে। বলা যায় এ যাত্রা ক্রিকেট-কূটনীতির নতুন মেরুকরণের জয় হয়েছে। বাংলাদেশ তাতেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারে।
(দ্য রিপোর্ট/এএস/আরকে/জানুয়ারি ২৯, ২০১৪)