দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বুধবার শেষ হচ্ছে আইসিসির বহুল প্রতীক্ষিত সভা। সেই সভায় ভারতীয় বোর্ডের জয়জয়কার নিশ্চিত হয়েছে৷ আইসিসি ক্রিকেট প্রশাসনের পরিকাঠামোয় গুরুত্বপূর্ণ বদল অনুমোদিত হয়ে গেল। সেখানে ভারতেই জিম্মি হয়ে পড়েছে আইসিসি। অবশ্য তাদের সঙ্গী হিসেবে সামনের সারিতেই থাকছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই মুহূর্তে ভারতসহ ওই ‘বিগ থ্রি’ই বিশ্ব ক্রিকেটের প্রধান নিয়ামক। তবে সবার চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকছে ভারত। অনেকটা; তারা যা চাইবে; ক্রিকেটে হবে তাই! তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর জুন থেকে আইসিসি বোর্ডের প্রথম চেয়ারম্যান হবেন ভারতীয় বোর্ডের নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন৷ তার মেয়াদ হবে ২ বছর৷

ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের যা দাবি ছিল তার অধিকাংশই আইসিসির বোর্ডের সভায় অনুমোদিত হয়েছে৷ তবে বাংলাদেশ বা জিম্বাবোয়েকে টেস্ট খেলার স্বীকৃতি হারাতে হচ্ছে না৷ প্রস্তাবিত টেস্ট ক্রিকেটের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের বদলে ফের ফিরে আসছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি৷ লভ্যাংশ বণ্টনের শর্ত অনেকটাই মেনে নিয়েছে আইসিসি৷

সভা শেষে আইসিসি প্রেসিডেন্ট অ্যালান আইজ্যাক বলেছেন, 'এটা বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়৷ আইসিসি বোর্ড সর্বসম্মতভাবে কিছু প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে যা ক্রিকেটকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে দেবে৷ অনেক সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে যা আগামী কয়েক দিনে রূপায়িত করার জন্য আইসিসির সঙ্গে জড়িত সবাইকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে৷' টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচাতে বিশেষভাবে তৈরি হচ্ছে এক অর্থ ভাণ্ডার৷ যাতে অংশ নিতে হবে ৭টি পূর্ণ সদস্য দেশকে৷ বাদ ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড৷ বাধ্যতামূলকভাবে টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচাতে এই ভাণ্ডারে বাকি ৭টি পূর্ণ সদস্য দেশকে অর্থ দিতে হবে৷

তবে এটা পরিষ্কার, প্রবল শক্তিশালী 'থ্রি মাস্কেটিয়ার্সে'র একচ্ছত্র আধিপত্য স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে আইসিসির সভায়৷ মেনে নেওয়া হয়েছে ভারতের নেতৃত্ব৷ তবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা বোর্ড আইসিসিকে চিঠি লেখায় টেস্ট ক্রিকেটে টু-টিয়ার সিস্টেম এখনই চালু হচ্ছে না৷ সে জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনো ভোটাভুটি এ দিনের সভায় হয়নি৷ বাকি সব সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে নিতে অসুবিধা হয়নি ভারতের৷

বিশ্ব ক্রিকেটে ক্ষমতা দখলের চেষ্টায় অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের সঙ্গে যেভাবে জোট বেঁধেছে ভারত, তা মোটেই পছন্দ নয় ইমরান খানের। পাকিস্তানের কিংবদন্তী এই অলরাউন্ডার টুইটার মারফত তার ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। ইমরান টুইট করেছেন, ‘বিগ থ্রি’র এই ভাবনাটা ক্রিকেট বিশ্বকে ভেঙে দেবে। আমার মনে আছে, ’৯৩ সালে আইসিসি-তে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেছিলাম। সেখানে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের কথা এখনো ভুলিনি।’

ইমরান আরও লিখেছেন, ‘আর এখন শুধু আর্থিক শক্তির জন্য ভারত এই ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার দলে ভিড়ছে। অথচ ’৯৩ সালে ভারত আমাদের সঙ্গেই ছিল। এই নতুন প্রস্তাবের সঙ্গে আমি একেবারেই একমত নই।’

আইসিসি-তে আমূল বদলের নতুন সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন এক আন্তর্জাতিক দুর্নীতিদমন সংস্থা। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) নামক ওই সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সঠিক এবং সুশাসনের অভাব হলে কিন্তু ক্রিকেট দুনিয়ায় দুর্নীতি আরও বাড়বে। এই সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বিগ থ্রি’র হাতে বিশাল ক্ষমতা তুলে দেওয়ার একটা বড় ঝুঁকি থেকে যায়। এতে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থে ক্ষমতার অপব্যবহার করার আশঙ্কা থাকে। কাউকে প্রশ্ন করারও আর জায়গা থাকে না।’

(দ্য রিপোর্ট/এএস/সিজি/সা/জানুয়ারি ২৯, ২০১৪)