কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মৃত্যুবার্ষিকী

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ১৯৯৭ সালের এ দিনে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ দেশের প্রগতিশীল শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক আন্দোলনের একনিষ্ঠ সৈনিক তিনি। তার মহাকাব্যোচিত উপন্যাস ‘খোয়াবনামা’ এ দেশের সর্বাঙ্গনের একটি প্রামাণ্যচিত্র।
তার পুরো নাম আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস, ডাক নাম মঞ্জু। তিনি ১৯৪৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধার গোটিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার বাড়ি বগুড়া জেলায়। বাবা বদিউজ্জামান মুসলিম লীগ দলীয় সাবেক পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য ছিলেন।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখালেখিতে হাতেখড়ি হয় স্কুলে পড়াকালে৷ এ সময় কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘সত্যযুগ’ ও ‘আজাদ’ পত্রিকায় ছোটদের পাতায় তার লেখা ছাপা হতো। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ‘সওগাত’ এ প্রথম ছোটগল্প ছাপা হয়। ১৯৬৪ সালের দিকে সাহিত্য বিষয়ক পত্রিকা ‘স্বাক্ষর’ এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ওই বছরই আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ সম্পাদিত ‘সাম্প্রতিক ধারার গল্প’ বইয়ে ইলিয়াসের ‘স্বগত মৃত্যুর পটভূমি’ নামে একটি গল্প অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৬৯ সালের মার্চ মাসে লিটল ম্যাগাজিন ‘আসন্ন’তে ‘চিলেকোঠায়’ নামে তার একটি গল্প প্রকাশিত হয়। ১৯৭৫ সালে ‘চিলেকোঠায়’ নামে তার প্রথম উপন্যাস ‘দৈনিক সংবাদ’ এর সাহিত্য পাতায় ধারাবাহিকভাবে ছাপা শুরু হয়। কিন্তু ওই সময় সরকার পরিবর্তন হওয়ায় সংবাদ কর্তৃপক্ষ উপন্যাসটি প্রকাশ বন্ধ করে দেয়।
১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয় ইলিয়াসের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘অন্য ঘরে অন্য স্বর’। ১৯৮১ সালের জানুয়ারিতে সাপ্তাহিক ‘রোববার’ পত্রিকায় ‘চিলেকোঠার সেপাই’ ধারাবাহিকভাবে ছাপা শুরু হয়। ১৯৮৬ সালের অক্টোবরে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড হতে বই আকারে প্রকাশিত হয় প্রথম উপন্যাস ‘চিলেকোঠার সেপাই’। গল্পগ্রন্থ ‘দোজখের ওম’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে। ১৯৯৪ সালে ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ সাহিত্যপাতায় ‘খোয়াবনামা’ উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে ছাপা শুরু হয়। এবারও পুরো উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার আগে রাজনৈতিক কারণে ছাপা বন্ধ করে দেয় পত্রিকাটি।
আটষট্টি-ঊনসত্তরের গণআন্দোলন একনিষ্ঠভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন ইলিয়াস। প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক মিটিংয়ে তিনি ছিলেন মনোযোগী শ্রোতা। বিশেষত মওলানা ভাসানীর মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ইলিয়াস পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তার লেখায় পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধপরবর্তী রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য হলো— হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৭), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৩), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), আনন্দপুরস্কার (১৯৯৬), সাদাত আলী আখন্দপুরস্কার (১৯৯৬), কাজী মাহবুবুল্লাহ স্বর্ণপদক (১৯৯৬) ও একুশে পদক (মরণোত্তর, ১৯৯৯)।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বিয়ে করেন ১৯৭৩ সালে। তার স্ত্রীর নাম সুরাইয়া। ডাকনাম তুতুল। তিনিও পেশায় শিক্ষিকা। ১৯৭৪ সালে জন্ম নেয় তাদের একমাত্র সন্তান আন্দালিব।
(দ্য রিপোর্ট/এফএস/এইচ/জানুয়ারি ০৪, ২০১৬)