‘শিক্ষকদের হেয় করা জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়’
চবি প্রতিনিধি : শিক্ষকদের হেয় প্রতিপন্ন করা জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয় বলে উল্লেখ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতি। ৪ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ জারিকৃত প্রেস রিলিজে শিক্ষকদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার প্রতিবাদে এ কথা বলেন চবি শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর ও সাধারণ সম্পাদক ড. কাজী এস এম খসরুল আলম কুদ্দুসী স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এর প্রতিবাদ জানান।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অষ্টম পে-স্কেলকে বর্তমান সময়ের জন্য যুগোপযোগী উল্লেখ করে বলা হয়, এ পে-স্কেল গেজেটে কিছু বৈষম্য সৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষকদের পূর্বের অবস্থানগত মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। এতে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আন্দোলন কর্মসূচি। বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) সকল পে-স্কেলেই ছিল এবং বর্তমান অষ্টম পে-স্কেলেও (চক্রবৃদ্ধি রূপে) তা অব্যাহত আছে। একটি নির্ধারিত স্কেলের সর্বশেষ ধাপে পৌঁছার এক বছর পর পরবর্তী উচ্চতর স্কেলে যাওয়ার প্রবিধান অর্থাৎ টাইম স্কেল অর্জনের বিধান লোপ করাই বর্তমান সমস্যার অন্যতম একটি কারণ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে পেয়ে আসা টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের প্রবিধান (বর্তমানে, গ্রেড-২ ও গ্রেড-১ প্রাপ্তির বিধান) বিলোপ করে যেভাবে নতুন নতুন শর্তাবলী আরোপ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে তা ১৯৭৩ সালের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট-এর পরিপন্থী। টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের প্রবিধান বিলোপ করার ফলে সপ্তম পে-স্কেল অনুযায়ী একই পদে কর্মরত (গ্রেড-১, গ্রেড-২ এবং গ্রেড-৩ প্রাপ্ত) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকগণের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। তদুপরি টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বিলুপ্তির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকরা কীভাবে গ্রেড-২ এবং গ্রেড-১ এ উন্নীত হবেন প্রকাশিত গেজেটে সে বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৫ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে প্রেরিত পত্রে যে প্রস্তাবনা রয়েছে তদনুযায়ী সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্ত অধ্যাপকের সংখ্যা বর্তমানের তুলনায় অর্ধেকে নেমে আসবে। সপ্তম বেতন কাঠামোতে কোন সুপার গ্রেড ছিল না। অষ্টম পে-স্কেলে দুটি সুপার গ্রেড সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু উপরোক্ত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্ত অধ্যাপকদের মধ্য থেকে কি হারে উন্নীত হবেন সে বিষয়ে কোন নির্দেশনা অষ্টম পে-স্কেল সংক্রান্ত গেজেটে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে (সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপকদের ২৫%) সুপার গ্রেড-২ তে উন্নীত করার জন্য ফেডারেশন থেকে দাবি জানানো হয়েছিল।
সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উচ্চতর ডিগ্রি (পিএইচডি, এমফিল), নির্দিষ্ট সংখ্যক গবেষণা প্রবন্ধ ছাড়া শুধুমাত্র অভিজ্ঞতার জোরে কোন ভাবেই পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব নয় (প্রশাসনসহ অন্য সকল ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা ও বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পদোন্নতি হয়ে থাকে)। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে ৩৫ বছর চাকরি করার পরও প্রথম নিয়োগের পদে থেকেই অবসর গ্রহণের কিছু উদাহরণও আছে।
বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতার সুযোগ খুবই সীমিত উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিকন্তু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা শুধুমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই করেন না, বর্তমানে প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তারাও তা করে থাকেন। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষকরা কর্মরত থাকবেন, সিনিয়র শিক্ষকরা পাঠদান ও গবেষণাকর্ম করবেন/তত্ত্বাবধান করবেন, এটিই জনগণের প্রত্যাশা। সুতরাং কতজনের মধ্যে কতজন ১/২ গ্রেড-এ থাকবেন এটি একেবারেই অমূলক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে মেধাবীরাই শিক্ষকতা করে থাকেন এবং দেশের সিংহভাগ মানসম্পন্ন পঠন-পাঠন ও গবেষণা এখনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই করে থাকেন।
নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাপারে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্লাসরুমে ক্লাস নিয়ে থাকলেও একটি ক্লাসের জন্য একজন শিক্ষকের কার্য সময়ের পর এমনকি রাত জেগেও প্রস্তুতি নিতে হয়। একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রস্তুত করার জন্য একজন শিক্ষককে মাসের পর মাস গবেষণা করতে হয়, নিরলস সময় ব্যয় করতে হয় গবেষণাগারে। পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজটি সাধারণত শিক্ষকরা কার্য সময়ের পরই করে থাকেন। সেশনজট নিরসনকল্পে শিক্ষকরা সাপ্তাহিক ছুটি ও অন্যান্য ছুটির দিনেও অনেক ক্ষেত্রে কাজ করে থাকেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ জারিকৃত প্রেস রিলিজে প্রকৃত সত্য গোপন করে একটি ধূম্রজাল তৈরির অপচেষ্টা বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষকের (যাদের মধ্যে অনেকেই প্রথিতযশা) প্রথমে ন্যায্য অধিকার কেড়ে নিয়ে এবং পরে বিভিন্নভাবে অপমান ও সরকারিভাবে একপেশে প্রেসনোট দিয়ে হেয় প্রতিপন্ন করা ও কোমলমতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে শিক্ষকদের অহেতুক প্রশ্নবিদ্ধ করা কারও কারও কাছে সাময়িক তৃপ্তির কারণ হলেও, জাতির জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে না বলে উল্লেখ করেন চবি শিক্ষক সমিতি নেতৃবৃন্দ।
(দ্য রিপোর্ট/এপি/এনআই/জানুয়ারি ০৫, ২০১৬)