চবি প্রতিনিধি : প্রকাশিত অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো সংশোধন এবং দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়িত না হলে ১১ জানুয়ারি থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতি।

একই সঙ্গে গেজেট সংশোধনের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে চবি শিক্ষক সমিতি। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে ও চবি শিক্ষক সমিতির আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

অবস্থান কর্মসূচিতে সরকারি টাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ‘চরিত্র হননের হীন মানসে’ প্রেস রিলিজ জারির তীব্র নিন্দা জানানো হয়। এ সময় বক্তারা বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতার সুযোগ খুবই সীমিত এবং মোট পাঠদানকারী শিক্ষক সংখ্যার হার ২-৩% এর বেশি নয়। তারা সেখানে জ্ঞান বিকাশে ভূমিকা পালন করেন।

শিক্ষকরা বলেন, অভিজ্ঞ সিনিয়র শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থেকে পাঠদান ও গবেষণাকর্ম তত্ত্বাবধান করবেন, এটিই জনগণের প্রত্যাশা। সুতরাং কতজন শিক্ষকের মধ্যে কী হারে ১/২/৩ গ্রেড-এ থাকবেন এ প্রশ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে একেবারেই অমূলক।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত সবচেয়ে মেধাবিরাই শিক্ষকতা করে থাকেন এবং দেশের সিংহভাগ মানসম্পন্ন পঠন-পাঠন ও গবেষণা এখনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই করে থাকেন বলে দাবি করেন চবি শিক্ষক সমিতির নেতারা।

বক্তারা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্লাসরুমে ক্লাস নিয়ে থাকলেও একটি ক্লাসের জন্য একজন শিক্ষকের কার্যসময়ের পর এমনকি রাত জেগেও প্রস্তুতি নিতে হয়। একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রস্তুত করার জন্য একজন শিক্ষককে মাসের পর মাস গবেষণা করতে হয়, নিরলস সময় ব্যয় করতে হয় গবেষণাগারে।

তারা বলেন, পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজটি সাধারণত শিক্ষকরা কার্যসময়ের পরই করে থাকেন। সেশনজট নিরসনকল্পে শিক্ষকরা সাপ্তাহিক ছুটি ও অন্যান্য ছুটির দিনেও অনেক ক্ষেত্রে কাজ করে থাকেন।

বক্তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক প্রথিতযশা শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নিয়ে বিভিন্নভাবে অপমান, পদ অবনমন, সরকারিভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা; কোমলমতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে শিক্ষকদের অহেতুক প্রশ্নবিদ্ধ করে উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকা এবং অবিলম্বে প্রতিশ্রুতির দাবিসমূহ মেনে নেওয়ার জোর দাবি জানান।

অবস্থান কর্মসূচিতে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত উক্ত কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে না বলেও হুমকি দেন চবি শিক্ষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. আবুল মনছুরের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ড. কাজী এস এম খসরুল আলম কুদ্দুসীর সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. কামরুল হুদা, শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি ও পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. শ্যামল রঞ্জন চক্রবর্তী, বনবিদ্যা ইনস্টিটিউটের সভাপতি প্রফেসর ড. খালেদ মিসবাহুজ্জামান, প্রাণরসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. দ্বৈপায়ন সিকদার, চাকসুর পরিচালক ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মো. তৌহিদ হোসেন, দর্শন বিভাগের প্রফেসর ড. ইকবাল শাহীন খান, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. নাজনীন নাহার ইসলাম, আইন বিভাগের শিক্ষক জসিম আলী চৌধুরী প্রমুখ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কর্মবিরতি ৩ জানুয়ারি থেকে অব্যাহতভাবে চলছে। তবে পূর্বঘোষিত পরীক্ষাসমূহ এর আওতামুক্ত রয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/জেএস/এমএআর/সা/জানুয়ারি ০৭, ২০১৬)