তাহিরপুরে লক্ষাধিক একর ফসলি জমি চরে পরিণত
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লক্ষাধিক একর ফসলি জমি এখন চরে পরিণত হয়েছে। ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নদীর মাধ্যমে প্রবাহিত এ সব বালু ভাটিতে আসছে প্রতিনিয়ত। ফলে উত্তর বড়দল ইউনিয়নসহ কয়েকটি ইউনিয়নের ছোট-বড় ১২টি নদী নাব্যতা হারিয়ে এখন মৃতপ্রায়। এতে ব্যাহত হচ্ছে নৌ-চলাচল।
জানা গেছে, নির্মাণ কাজের অন্যতম উপকরণ বালু, বোল্ডার পাথর ও সিঙ্গেল পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। যার ফলে ভূমিহীন হয়ে পড়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
অপরদিকে বালুতে ঢাকা পড়েছে ১০-১৫টি গ্রাম। ফসলি জমির ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার কৃষক পরিবার এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। তবে বালু সরাতে সরকারিভাবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বালুতে ভরে যাওয়ায় পাহাড়ি নদীগুলোর পানি ধারণক্ষমতা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানিতে প্রতিবছর নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি।
বালু পড়ে সুনামগঞ্জ জেলা সদর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুর ও দোয়ারা উপজেলা অধিকতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বালিচাপা পড়ে উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। উর্বরতা হারিয়ে জমি ফসলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়া পাঠলাই ও বৌলাই নদী এখন নিশ্চিহ্নপ্রায়। এক সময়ের খরস্রোতা পাঠলাই নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল ঐতিহাসিক লাউড় রাজ্যের রাজধানী। সেই নদীবক্ষে এখন আমন ধানের চাষ হয়। তাহিরপুর উপজেলার পচাসোল, বিকিবিল, লালকুড়ি ও লোভার হাওর যেগুলোতে চৈত্রেও ১০-১৫ হাত পানি থাকত সেগুলো এখন ধু-ধু বালুচর।
ডলুরা নদীর মাধ্যমে প্রবাহিত বালিতে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বিখ্যাত খরচার হাওরের প্রায় ৫০ হাজার একর জমির ফসল প্রতিবছর হুমকির সম্মুখীন হয়। মাহারাম নদীর করাল গ্রাসে মাহারাম গ্রামটি অনেক আগেই তাহিরপুরের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে।
হাওর বাঁচাও দেশ বাঁচাও আন্দোলনে সুনামগঞ্জ জেলার প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ ফুল মিয়া চেয়ারম্যানসহ অনেকেই জানান, উপর্যুপরি জমিতে বালু পড়ে এ এলাকার ৮-১০টি গ্রামের কৃষক বেকার হয়ে পড়েছেন।
এ সমস্যা সমাধানে আজ পর্যন্ত কোনো স্থায়ী পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। তাহিরপুর উপজেলাবাসী বালু সমস্যা দূরীকরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
(দ্য রিপোর্ট/আরআর/ইইউ/এএস/এএল/জানুয়ারি ৩০, ২০১৪)