নারায়ণগঞ্জে অনিশ্চয়তায় সরকারি চাল সংগ্রহ
মো. মামুন মিয়া, নারায়ণগঞ্জ : ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আমন মৌসুমে নারায়ণগঞ্জে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর থাকলেও এ সময়ে নারায়ণগঞ্জের চালের মিল মালিকদের কেউ সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হননি। মিল মালিকদের দাবি, সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যের থেকে অধিক দামে বাইরে চাল বিক্রি করতে পারায় তারা সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হননি।
গত মৌসুমে নারায়ণগঞ্জ থেকে আমন ধানের চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেক অর্জিত হলেও এ বছর চাল সংগ্রহের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নারায়ণগঞ্জে আমন ধানের চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৯৪ টন আর সরকারিভাবে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা প্রতিকেজি।
বছরের ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস হলো আমন ধানের চাল সংগ্রহের মাস। এ তিন মাসে চালের আড়তদাররা কৃষকদের কাছ থেকে আমন ধান সংগ্রহ করে মিলে মেশিনের মাধ্যমে মাড়াই করে চালে রূপান্তর করে থাকেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলায় বর্তমানে এমন আড়ত রয়েছে ১০টি, যাদের কাছ থেকে খাদ্য অধিদফতরের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক চাল সংগ্রহ করে থাকেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে এ সব আড়তের মধ্যে কাউকেই চুক্তিবদ্ধ করতে পারেননি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।
খাদ্য অধিদফতরের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আমন মৌসুমে আমন ধানের চাল সংগ্রহে সরকার প্রতিকেজির দাম নির্ধারণ করেছে ৩০ টাকা। আর নারায়ণগঞ্জ থেকে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৯৪ টন। গত বছর এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪০ টন। আর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় ২০২.৮ টন। ওই মৌসুমে চালের কেজিপ্রতি মূল্য নিধারণ করা হয়েছিল ২৬ টাকা। এ মৌসুমে সরকারের সঙ্গে মিল মালিকদের চুক্তিবদ্ধ হওয়ার শেষ দিন ছিল ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু ওই দিন পর্যন্ত মিল মালিকদের কেউ সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হননি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সালাউদ্দিন আহম্মেদ দ্য রিপোর্টকে জানান, নারায়ণগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় ১০টি চালের আড়ত রয়েছে। তাদের সবাইকে আমরা চিঠি দিয়েছিলাম। এদের মধ্যে সাতজনই আবেদন করেছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা আমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হননি। সরকার চালের মূল্য প্রতিকেজি ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু মিল মালিকরা চাল বাইরে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন, তাই তারা আমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হননি।
এদিকে বন্দর উপজেলায় অবস্থিত হাজী আলাউদ্দিন অটো রাইস মিলের মালিক আলাউদ্দিন জানান, আমন মৌসুমে সাধারণত দেশের উত্তরাঞ্চল দিনাজপুর, বগুড়া, রংপুর থেকে ধান সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। কৃষকদের কাছ থেকে তারা ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা মণ ধান সংগ্রহ করে থাকেন। অবরোধের আগে ধান সংগ্রহের পর পরিবহন খরচ, শ্রমিকের মজুরি ও ধান মাড়াইয়ের খরচ সহকারে মণপ্রতি আরও ২০০ থেকে ২২০ টাকা খরচ হতো। কিন্তু অবরোধের কারণে পরিবহনের খরচ প্রায় দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান থেকে চালে রূপান্তরের ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরও জানান, অবরোধের আগে উত্তরাঞ্চল থেকে একটি ট্রাকে মাত্র ১২ হাজার টাকা খরচ হতো, সেই খরচ এখন ২৬ থেকে ৩০ হাজার টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সরকারের পক্ষ থেকে চালের মণপ্রতি দাম ধরা হয়েছে মাত্র ১২০০ টাকা। কিন্তু বাইরের বাজারে মূল্য ১৭০০-১৮০০ টাকা। দামের কারণে এবার আমন মৌসুমে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারিনি আমরা। এ ছাড়াও অবরোধের কারণে ঠিকমতো ধান সংগ্রহ করতে না পারার কারণেও আমরা চুক্তিবদ্ধ হতে পারিনি।
(দ্য রিপোর্ট/এমএমএম/এএস/শাহ/জানুয়ারি ৩০, ২০১৪)