চট্টগ্রাম অফিস : হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী বলেছেন, শান্তিপ্রিয় আলিম সমাজ, ধর্মপ্রাণ মানুষ ও কুরআন-হাদিসের বিশুদ্ধ জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র কওমী মাদরাসা সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে, জঙ্গি তৎপরতার বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র প্রমাণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

ইয়াহুদি-খ্রিস্টান সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী ও আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর এদেশীয় এজেন্টরা এ কাজ করছে এমন অভিযোগ করেন তিনি বলেন, ঔপনিবেশিক শক্তির আগ্রাসনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে যারা অব্যাহতভাবে নিয়োজিত রয়েছে তারা দেশ ও জাতির বন্ধু হতে পারে না।

চট্টগ্রাম লালদীঘি ময়দানে বৃহস্পতিবার রাতে হেফাজতে ইসলামের দু’দিনব্যাপী ইসলামী মহাসম্মেলনে প্রথম দিবসে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ইসলামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। যারা আল্লাহর হুকুম ও তার রাসূল (সা.) এর জীবনাদর্শ পূর্ণাঙ্গরূপে অনুসরণ করে চলে তারা সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারে না।

আহমদ শফী মিডিয়ার ভ্রান্ত নীতির সমালোচনা করে বলেন, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার অনুষ্ঠানে ইসলাম, মুসলমান, ইসলামের প্রতীক ও ইসলামী শিক্ষার বিরুদ্ধে হরদম মিথ্যা, ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে।

কতিপয় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সাধারণ মানুষের মগজ ধোলাই ও মানুষের মনে ঘৃণা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নানা অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই অপশক্তির নিয়োজিত ভাড়াটে লোকগুলোই দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ক্ষেত্র বানানোর ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। এদের মোকাবেলায় দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে সকল কালেমা বিশ্বাসী মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, বলন আহমদ শফী।

তিনি বলেন, কওমী মাদরাসায় কোনো সন্ত্রাস ও জঙ্গি কর্মকাণ্ড হয় না। এখানে আল্লাহওয়ালা, বুজর্গ ও কুরআন-হাদিসের পাণ্ডিত তৈরি হয়।

আল্লামা আহমদ শফী বলেন, জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাকওয়া ও খোদাভীতি অনুসরণ করলে সমাজের নৈরাজ্য, অশান্তি, দুর্নীতি ও হানাহানির লেশমাত্র থাকতো না।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ পরিপূর্ণ অনুসরণ করে শিরক-বিদআত ও নাস্তিকতা মুক্ত আদর্শ সমাজ গড়া হেফাজতে ইসলামের লক্ষ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা প্রাত্যহিক জীবনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পাশাপাশি সুন্নাতে রাসূলের ইত্তেবা করবেন। বেশি বেশি করে প্রিয়নবী সা. এর প্রতি দরুদ পাঠ করবেন। গিবত, শেকায়েত, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা থেকে নিজে বিরত থাকবেন, পরিবার-পরিজনকে বিরত রাখবেন। মানুষের হক নষ্ট করবেন না। কারো ইজ্জতর উপর আঘাত করবেন না।

হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলাম, মাওলানা সালাহুদ্দিন নানুপুরী ও মাওলানা শিহাবুদ্দিন চার অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী, মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়তের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা হাফেজ নুরুল ইসলাম, মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা মোস্তফা আল হোসাইনী, মাওলানা আবদুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক মাওলানা ওবাইদুর রহমান খান নদভী, মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা শহীদুল্লাহ উজানী, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, মাওলানা মুইনুদ্দিন রূহী, মাওলানা হাফেজ ফয়সাল ও মাওলানা আহমদুল্লাহ।

সভাপতির ভাষণে মাওলানা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলামবিদ্বেষী অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের জিহাদ চলবে। নবী প্রেমিক জনতার বুকে এক ফোটা রক্ত থাকা পর্যন্ত নবীর সঙ্গে যারা বেয়াদবি করে, ওলামায়ে কেরামের প্রতি বিদ্রুপ করবে ও মসজিদ মাদরাসার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, যারা আল্লাহর ফরজ বিধানকে ইচ্ছাকৃতভাবে কটাক্ষ করবে, হারাম বিধানকে অবৈধ নয় বলে ঘোষণা দিবে তারা কোনোভাবেই ঈমানদার হতে পারেনা। বর্তমান সরকারের কতিপয় মন্ত্রী ইসলামী বিধিধিান সম্পর্কে কটাক্ষ ও অপব্যাখ্যা করে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে যদি সর্বোচ্চ সাজার বিধান কার্যকর করার দৃষ্টান্ত তৈরি হতো, তাহলে ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগার ও তসলিমা-লতিফের মতো ঘৃণিত কুলাঙ্গাররা মাথাচাড়া দিতে সাহস করতো না। কিন্তু ধর্ম অবমাননার সর্বোচ্চ সাজা না থাকায় এদের মতো বেয়াদব নাস্তিক-মুরতাদরা প্রকাশ্যে ইসলামী বিধিবিধানের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছে। একই সঙ্গে আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর অবমাননার দুঃসাহস দেখাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ ক্ষমতাসীন সরকারের ধর্মহীন মন্ত্রীরা ইসলামী নীতিমালা ও বিধিবিধানের বিরুদ্ধে একের পর এক উস্কানিমূলক ও বিদ্বেষপ্রসূত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এতে মনে হচ্ছে দেশের ক্ষুদ্রসংখ্যক ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক ও মুরতাদ গোষ্ঠীর প্ররোচনায় চিহ্নিত ইসলাম বিদ্বেষী মন্ত্রীরা নিজেরা ধর্মপালন করেই না। একই সঙ্গে তারা দেশের ধর্মপ্রাণ জনতাকে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীন করার ষড়যন্ত্র করছেন। তাদের এই ষড়যন্ত্র বাংলার তৌহিদী জনতা রুখে দেবে ইনশাআল্লাহ।

মাওলানা হাফেজ নুরুল ইসলাম বলেন, সারা বিশ্বের মুসলমানদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যারা রাসুল (সা.) কে শেষ নবী মানে না, তারা কাফির। ইসলামের নাম ব্যবহারকারী অমুসলিম কাদিয়ানী সম্প্রদায় মুসলমানদের ঈমান হরণের নানামুখী অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের ছড়ানো বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার সম্পর্কে সকলকে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এসএস/এনআই/জানুয়ারি ১৫, ২০১৬)