চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে দুই চা বাগানের ম্যানেজারকে পিটিয়ে আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। রবিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার ব্র্যাক কর্ণফুলী চা বাগান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।  

বাগানের কর্মচারী বজলু অভিযোগ করেন, ওই ঘটনার সঙ্গে পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রুপ ইউপিডিএফ (পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) জড়িত। ঘটনার পর কাঞ্চননগর ও আশপাশের পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আহতরা হলেন— কর্ণফুলী চা বাগানের ম্যানেজার শাহনেওয়াজ ও একই বাগানের ট্যাকবাড়িয়া ডিভিশনের ম্যানেজার মো. ইলিয়াছ। তাদের চট্টগ্রাম মহানগরীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

ফটিকছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মফিজ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফটিকছড়ি-লক্ষ্মীছড়ি সীমান্তের ট্যাকবাড়িয়া এলাকায় কয়েক সপ্তাহ ধরে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ও চা বাগান কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। সীমানা ও চা বাগানের ভূমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত সপ্তাহে উপজাতীয়দের নয়টি ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পর পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়।

মঙ্গল ও বুধবার থেকে বিরাজমান উত্তেজনা নিরসনে বৃহস্পতিবার কাঞ্চননগর ইউনিয়ন পরিষদে এক শান্তি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপজাতীয়রা অভিযোগ করেন, ট্যাকবাড়িয়া এলাকায় তারা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। এসব এলাকার ভূমিও তারা চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু চা বাগানের মালিকপক্ষ জোরপূর্বক তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছেন। এরই অংশ হিসেবে বুধবার দুপুরে তাদের ৮-৯টি বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

তবে ওই বৈঠকে ব্র্যাক কর্ণফুলী চা বাগান কর্তৃপক্ষ উপজাতীয়দের অভিযোগ মিথ্যা বরে দাবি করেন। বাগানের ম্যানেজার শাহনেওয়াজ জানান, চা বাগানের ইজারা করা ট্যাকবাড়িয়া ডিভিশনের বিশাল এলাকা ৫-৬ মাস আগে থেকে পাহাড়িরা টংঘর তৈরি করে দখল করে রেখেছে। তাদের চা বাগানের জমির দখল ছেড়ে দিতে বলা হলেও বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। বুধবার কাঞ্চননগর গ্রামবাসীদের সঙ্গে চা শ্রমিকদের একটু ভুল বোঝাবুঝির পর তৃতীয় কোনোপক্ষ টংঘরগুলো পুড়িয়ে দেয়।

শান্তি বৈঠকে পুড়ে যাওয়া এসব ঘর পুনরায় মেরামত করে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ২৮ জানুয়ারি একটি সমঝোতা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

বাগানের কর্মচারী বজলু জানান, রবিবার সকালে দুই ম্যানেজার ইলিয়াছ ও শাহনেওয়াজ প্রতিদিনের মতো বাগানের ফেনুয়া ডিভিশন এলাকার ২৮নং ব্লক পরিদর্শনে যান। এ সময় ১৫-২০ জনের সশস্ত্র উপজাতী সন্ত্রাসী তাদের ঘিরে ফেলে। নাম-পরিচয় জানার একপর্যায়ে তারা অতর্কিতভাবে তাদের ওপর চড়াও হয়। তারা শাহনেওয়াজ ও ইলিয়াছকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে।

খবর পেয়ে বাগানের অন্যান্য শ্রমিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতাবস্থায় দুই ম্যানেজারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

(দ্য রিপোর্ট/এমএআর/সা/জানুয়ারি ১৭, ২০১৬)