সব দায়িত্ব ব্যাটসম্যানদের : মুশফিক
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : হঠাৎ ছন্দপতন। তাও আবার টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্কটকালে। তবে ম্যাচের দৃশ্যমান সমীকরণ; চাপে নয়, ব্যাটসম্যানদের ও ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় ৪ সেশন আগেই ম্যাচ শেষ। চতুর্থ দিনে চা বিরতি যাওয়ার আগেই বড় হারের লজ্জ্বা।
৩ বছর দারুণ সময় কাটানো বাংলাদেশ সর্বশেষ ২০১১ সালে চট্টগ্রামে পাকিস্তানের বিপক্ষে ইনিংস এবং ১৮৭ রানে হেরেছিল। এরপর ধারাবাহিকভাবে টেস্ট ক্রিকেট ভালো খেলেছে মুশফিক বাহিনী। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুশফিকরা খারাপ খেলে; তাও মিথ্যা প্রমাণ করেছে শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট ড্র করে। সর্বশেষ হোম সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু আবারও ইনিংস হার; এমন হারে মুশফিক নিজেও হতাশ দলের ও নিজের পারফর্মমেন্সে। কারণ এই ধরনের মরা উইকেটে ব্যাটসম্যানদের আরও ভালো খেলার যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে। কোনো যুক্তি-তর্কে না গিয়ে মুশফিক স্রেফ বলেছেন, ‘ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বহীনতায় ২টি ইনিংসই বড় করতে পারেনি বাংলাদেশ।’ বলেছেন আরও সমস্যা ও করণীয় কথা। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে কি বলেছেন তারই চুম্বক অংশ তুলে ধরা হল-
প্রশ্ন : গত কয়েক বছর ধরে ভালো ক্রিকেট খেলে হঠাৎ ছন্দপতন; কি মনে করেন?
মুশফিকু রহিম : স্বাভাবিকভাবেই গত একবছর ধরে আমরা ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলছি। নিজের মাঠে খেলা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত খুব বাজে ভাবে হেরে গেছি। আমাদের বল যে খুব খারাপ হয়েছে তা নয়। ব্যাটসম্যনরা তাদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারেনি। মিডল অর্ডার পুরোপুরি ব্যর্থ হওয়ার কারণে এ অবস্থা। আমাদের বোলিং খারাপ হয়নি। তবে ফিল্ডিং খুব বাজে হয়েছে। ব্যাটিংয়ে যে সমস্যা হয়েছে পরের টেস্টে তা কাটিয়ে উঠতে হবে। ব্যাটসম্যানরা যেভাবে আউট হয়েছে তা খুব চোখে লেগেছে। আমাদের ব্যাটসম্যানদের এ উইকেটে বড় ইনিংস খেলার সামর্থ রয়েছে। কিন্তু এ টেস্টে তারা ব্যর্থ হয়েছে। অবশ্যই শ্রলীঙ্কার কাছে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আগের সিরিজে ভালো করার পর এমন ব্যাটিং নিশ্চয়ই ক্ষাণিকটা ছন্দপতন হয়েছে।
প্রশ্ন : আইসিসির নতুন প্রস্তাব নিয়ে চাপ অনুভব করেছেন কী না ?
মুশফিকুর রহিম : চাপ নেওয়ার মতো তেমন কিছু নেই। খেলাটা আমাদের এখানে কাউকে কিছু প্রমাণ করতে হবে তা ভেবে খেলছি না। ভালো দলের সঙ্গে ভালো খেলা, তা আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা তা করতে ব্যর্থ হয়েছি। পরের টেস্টে আমাদের ভুলগুলো শুধরে নিতে হবে। সম্ভবত এটা আমাদের জন্য একটি সর্তকবার্তা। এর চেয়ে শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষেও ব্যাটসম্যানরা খেলেছে। সেক্ষেত্রে আমাদের ব্যক্তিগতভাবেও বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা দরকার এবং বিষয় নিয়ে কাজ করা দরকার।
প্রশ্ন: তামিম ২ ইনিংসে যেভাবে শট খেলে আউট হয়েছে তাতে দলের মধ্যে প্রভাব পড়েছে কী না?
মুশফিকুর রহিম : আসলে যে যেভাবে ব্যাটিং করে সেভাবেই করতে দেওয়া উচিত। তবে আমার মনে হয়; আমাদের ব্যাটসম্যানদের আর একটু সচেতন হওয়া উচিত। তৃতীয় দিন তামিম যে শট খেলেছে; আমাদের হাতে ৯ ওভার ছিল আমাদের টিকে থাকা উচিত ছিল। তামিমও তা জানত। এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা উচিত। আমরা যদি একটু সচেতন হয়ে খেলতাম তাহলে আজ (বৃহস্পতিবার) ১০ উইকেট নিয়ে ভালোভাবে শুরু করতে পারতাম। তামিম নিজে চিন্তা করলেই শুধরে নিতে পারবে। ও আমাদের দলে সবচেয়ে ভালো ব্যাটসম্যান। ও ভালো খেললে বাকি ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ কম পড়ে।
প্রশ্ন: ৩ পেসার না খেলিয়ে আরও একজন স্পিনার খেলালে কী ভালো হতো?
মুশফিকুর রহিম : অবশ্যই ওরা যে সুযোগ দেয়নি তা নয়। আমরা সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে হয়তো তাদেরকে ৫৫০ মধ্যে আটকে রাখতে পারতাম। আমরা আমাদের ব্যাটিং স্বাভাবিক হলে ম্যাচটি একটু কঠিন হতে পারত। স্পিনারা যে কোনো উইকেটে শেষ দিকে একটু সাহায্য পাবে এটাই স্বাভাবিক। দুর্ভাগ্যবশত আমরা টসে হেরে গিয়েছিলাম। প্রথমে বোলিংয়ে করতে পারলে হয়ত পেসাররা একটু সুবিধা আদায় করে নিতে পারত। তখন ৩ পেসার যৌক্তিকতা প্রমাণ সম্ভব হত। কিন্তু দুর্ভাগ্য।
প্রশ্ন: টেস্ট খেলা নিয়ে ভক্তদের আন্দোলন; অথচ এমন খেলা, অবিচার করা হল কিনা?
মুশফিকুর রহিম : না, আমার মনে হয় অবিচার করার তেমন কিছু নেই। ক্রিকেট সবাই ভালবাসে। আমরাও ভালবেসে এখানে এসেছি। যা ইচ্ছা তা করার জন্য এখানে আসিনি। আমরা সবসময় ভালো খেলার চেষ্টা করি দেশের জন্য। এমন স্পোটিং উইকেটে আমরা প্রথম ইনিংস ভালো করলে; ওরা হয়ত আরও ব্যাটিং করত। আমরা একটু ভালো খেললে ম্যাচ অন্যরকম হতে পারত।
প্রশ্ন: এ টেস্টে আপনার কি কিছু ড্রপ ক্যাচ ছিল?
মুশফিক: আমি শেষ কবে ক্যাচ ছেড়েছি তা মনে করতে পারছি না। আমি যখন ক্যাচটি ছেড়েছিলাম আমার খুব খারাপ লাগছিল। আমার সামনে ৫০, ৭০, ১১০ করছিল সিলভা। নিজের কারণে দলটা লুজ হয়ে গেল। এ বিষয় থেকেই পরে আরও ড্রপ হয়েছে। এটা পার্ট অব দ্য গেম। তারপরও এটা ভুল। ৩ দিনের মধ্যে সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করব। এর মধ্যে ভালো কিছু হয়েছে; যেগুলো রিমাইন্ডার করব। চট্টগ্রামে আমাদের দল হিসেবে ভালো রেকর্ড আছে। শর্ট বল সম্পর্কে সবারই ধারনা আছে। আমরা চেষ্টা করছি। অ্যাপলিকেশনের একটু সমস্যা হচ্ছে।
প্রশ্ন : ইনিংস হারের লজ্জ্বা; আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?
মুশফিকুর রহিম : আমরা এ ব্যাটিং নিয়ে অনেক শক্তিশালী দলের সঙ্গে ভালো খেলেছি। ব্যর্থ হওয়ার একটা সীমাবদ্ধতা তো থাকে দ্বিতীয় ইনিংসতো ভালো ব্যাটিং হতে পারত। কিন্তু আমাদের পর পর ২টি ইনিংসই খারাপ হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি পারি আমাদের সমস্যা সমাধান করতে হবে। আমার মনে হয় মানসিক কিছু মনোভাব পরিবর্তন করা দরকার। আমি আশা করি ঢাকা টেস্টের চেয়ে চট্টগ্রাম টেস্ট অনেক ভালো হবে । সব মিলিয়ে এরকম বিশাল কলাপ্সড হওয়ার চান্স নেই।
প্রশ্ন : অনেক বছর পর দলের ব্যর্থতার জবাব দিতে হচ্ছে?
মুশফিকুর রহিম : মাঠে নিজের ভেতর অনেক খারাপ লেগেছে। কিন্তু কিছু করার নেই। তবে আশা করি সবাই দায়িত্ব নেবে । পরবর্তি টেস্ট ঘুরে দাঁড়াতে পারব।
(দ্য রিপোর্ট/আরআই/এএস/সিজি/আরকে/জানুয়ারি ৩০, ২০১৪)