মন্ত্রীর স্বজনদের মামলা : প্রতিবাদে চিকিৎসকদের ধর্মঘট
চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামে তিন ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রতিবাদে নগরীর সকল বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে। আকস্মিকভাবে বুধবার থেকে এ কর্মসূচির কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
অবহেলা আর ভুল চিকিৎসায় শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসির ভাতিজি মৃত্যুর ঘটনায় দুই ডাক্তার এবং অপারেশনের সময় এক কিশোরের পেটে ব্যান্ডেজ রাখার অভিযোগে ৩ ডাক্তারের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বিকেল থেকে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
দুপুরে বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার এক জরুরি বৈঠকে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এ ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান।
তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করার দাবিতে দুপুর ২টা থেকে চট্টগ্রামের সব বেসরকারি ক্লিনিকে সকল ধরনের প্রাইভেট চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকবে। এছাড়া সরকারি হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা ছাড়া নিয়মিত কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার হবে না। তবে রুটিন চিকিৎসাসেবা চলবে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে মামলা প্রত্যাহার করা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান চিকিৎসকদের এই নেতা।
ডা. মুজিবুল হক দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চিকিৎসাসেবাকে কেন্দ্র করে ক্লিনিকে হামলা, ভাঙচুর ও ডাক্তারদের বিরুদ্ধে মামলা করাটা এখন একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে অনেক শ্রম ব্যয় করতে হয়। একজন ডাক্তার কখনো কাউকে মারতে চান না। তারপরও মৃত্যু হবেই। এর জন্য আমাদের ওপর হামলা মামলা হবে কেন?
তিনি বলেন বাধ্য হয়ে আমরা এ কর্মসূচি দিয়েছি।
এদিকে চিকিৎসকদের এ ধরনের আকস্মিক সিদ্ধান্তের ফলে বিপাকে পড়েছেন নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে ডা. মাহবুবুল আলম ও ডা. শামীমা রোজী এবং অপারেশনের পর রোগীর পেটে ব্যান্ডেজ রেখে দেওয়ার অভিযোগে ডা. রানা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। মঙ্গলবার এ দুটি মামলা আমলে নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিচারক মোহাম্মদ ফরিদ আলম পাঁচলাইশ থানা পুলিশকে এজাহার হিসেবে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দায়েরকৃত দুটি মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন চট্টগ্রামের চিকিৎসকরা।
গত ৯ জানুয়ারি নগরীর সার্জিস্কোপ হাসপাতালে সন্তান প্রসবের পর চিকিৎসকদের অবহেলায় মৃত্যু হয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছোট ভাই খাইরুল বশরের মেয়ে মেহেরুন্নেছার। এ ঘটনায় ডা. মাহবুবুল আলম ও ডা. শামীমা রোজীকে দায়ী করা হয়। ঘটনার পর নগরী সার্জিস্কোপ ক্লিনিকে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়।
এছাড়া অপারেশনের সময় নুরুল আবছার নামে এক কিশোরের পেটে ব্যান্ডেজ রাখার অভিযোগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. রানা চৌধুরীর বিরুদ্ধে একই আদালতে ছেলের অঙ্গহানির অভিযোগ এনে মামলা করেছেন ওই কিশোরের বাবা জেবল হোসেন।
(দ্য রিপোর্ট/এপি/এম/জানুয়ারি ২০, ২০১৬)