চিকিৎসকের ধর্মঘট ‘অমানবিক ও অন্যায়’
চট্টগ্রাম অফিস : তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে তৃতীয় দিনের মতো বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। দুর্ভোগে পড়া হাজারও রোগী বলছেন, চিকিৎসকের এ ধর্মঘট ‘অমানবিক ও অন্যায়’।
বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশনের ডাকে ২০ জানুয়ারি দুপুরে এ ধর্মঘট শুরু হয়। ধর্মঘট নিরসনে কোনো পক্ষ এগিয়ে না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগীরা। আইনি বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দুর্ভোগে ফেলা কোনো পেশার জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন রোগীরা।
ধর্মঘটের তৃতীয় দিন শুক্রবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আসা রোগীদের ফিরে যেতে দেখা গেছে।
নগরীর চকবাজার এলাকায় একটি বেসরকারি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে কথা হয় কর্ণফুলী ডাঙ্গার চর থেকে আসা বৃদ্ধ ইদ্রিস আলীর সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘শেষ বয়সে নানা রোগে ভুগছি। বৃহস্পতিবার থেকে কফ পরীক্ষার জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরছি। কিন্তু কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তা করানো সম্ভব হচ্ছে না। সকালে আসতে বলায় এত দূর থেকে আসলাম। কিন্তু তারা বলছে আজও তাদের স্ট্রাইক চলছে।’
বৃদ্ধ ইদ্রিস আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ দেশের কোনো মালিক নাই। তিন দিন ধরে এত মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, কেউ তার সমাধান করছে না কেন? মন্ত্রী-এমপি আর প্রশাসনের কাজ কী? তারা কেন চুপ করে আছে?’
বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ডাক্তারদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে। শনিবার দুপুরে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের সামনে মানববন্ধন পালন করবেন চিকিৎসকরা। আর বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা কর্মসূচির বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করব।’
তবে বিএমএর ডাকা এ লাগাতার ধর্মঘটের সঙ্গে অনেক চিকিৎসক ব্যক্তিগতভাবে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তারা সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে জিম্মি করার পক্ষে নয় বলে মত দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক দুপুরে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘দু-একজন চিকিৎসকের জন্য লাখ লাখ মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত এবং শত শত প্রতিষ্ঠান কেন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আইন সবার জন্য সমান, এ দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা হলে, জেলে যেতে পারলে ডাক্তাররা কেন পারবে না। আমরা ডাক্তাররা কি আইনের ঊর্ধ্বে?’
তিনি বলেন, ‘শুধু মামলা হয়েছে, গ্রেফতার তো হননি। তাহলে কেন এত কঠোর আন্দোলন? এ আন্দোলনের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না, করলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিএমএ। তাই সবাই নীরবে সহ্য করছেন।’
বেসরকারি হাসপাতাল ‘সার্জিস্কোপে’ ১০ জানুয়ারি প্রসব-পরবর্তী সময়ে মারা যান মেহেরুন্নেসা রীমা (২৫) নামে এক গৃহবধূ। রীমা প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছোট ভাইয়ের মেয়ে। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীমা সিদ্দিকী রোজি ও তার স্বামী মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে মামলা করেন রীমার বাবা খায়রুল বাশার।
এ ছাড়া অপর এক ঘটনায় চমেক হাসপাতালে অপারেশনের সময় নুরুল আবছার নামে এক কিশোর রোগীর পেটে ব্যান্ডেজ রেখে দেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. রানা চৌধুরীর বিরুদ্ধে পৃথক একটি মামলা করেন ওই কিশোরের বাবা জেবল হোসেন।
আন্দোলনরত চিকিৎসকরা জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মাহবুব আলম, ডা. শামীমা সিদ্দিকী রোজি ও ডা. রানা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ‘হয়রানি ও মানহানিমূলক মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রাখার এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। তবে ধর্মঘটের তৃতীয় দিনে আইসিইউ ও শিশু রোগীদের চিকিসা ধর্মঘটের আওতামুক্ত রাখা হয়।
(দ্য রিপোর্ট/জেএস/এনডিএস/এম/জানুয়ারি ২২, ২০১৬)