রোগী জিম্মি : সাংবাদিকদের তোপের মুখে বিএমএ নেতারা
সম্মানজনক সমাধান না হলে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ
চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে চলমান কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসক নেতারা। শনিবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিএমএ নেতারা বলেন, ‘‘দায়ের হওয়া মামলার ব্যাপারে সম্মানজনক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নগরীর সকল ক্লিনিকে ‘প্রাইভেট প্র্যাকটিস’ বন্ধ অব্যাহত থাকবে।’’
প্রসঙ্গত, ১০ জানুয়ারি নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল সার্জিস্কোপে অস্ত্রোপচারে সন্তান হওয়ার পর মারা যান প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ভাইঝি মেহেরুন্নেসা রীমা। চিকিৎসকদের অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ এনে ওই দিন রাতে হাসপাতাল ভাঙচুর করেন তার স্বজনরা। ওই ঘটনায় পর ১৯ জানুয়ারি আদালতে যান রীমার বাবা খায়রুল বাশার। মেয়ের মৃত্যুর জন্য অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম মেডিকেলের গাইনি বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সিদ্দিকী রোজী ও তার স্বামী ডা. মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ আনেন তিনি।
আদালত ওই অভিযোগকে মামলা হিসেবে গ্রহণের জন্য পাঁচলাইশ থানার ওসিকে নির্দেশ দিলে পরের দিন থেকে কর্মবিরতিতে যান চিকিৎসকরা। ফলে হাজার হাজার রোগী চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) নেতারা শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে মামলার ব্যাপারে ‘সম্মানজনক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নগরীর সকল ক্লিনিকে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ থাকবে’ বলে ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে হাজার হাজার রোগীকে জিম্মি করে কর্মবিরতি পালন করায় সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন চিকিৎসক নেতারা। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন তোলেন তাদের আন্দোলনের বিষয়ে। তাদের দাবি, চিকিৎসকদের আন্দোলন আদালত অবমাননার শামিল। বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা চাই মামলা প্রত্যাহার হোক এবং প্রাইভেট চেম্বার ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখার পরিবেশ ফিরে আসুক।’
সংবাদ সম্মেলনে মামলার বিরোধিতা করে বিএমএ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ মেধা-শ্রম দিয়ে একজন রোগীকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করি। তবে কোনো কিছুরই সফলতার হার শতভাগ নয়। কিন্তু এর জের ধরে হাসপাতালে ভাঙচুর, চিকিৎসকদের নিরাপত্তাহীনতায় ফেলে দেওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত।’
তিনি দাবি করেন, ‘অস্ত্রোপচারসহ যেকোনো ধরনের চিকিৎসায় ত্রুটি বা জটিলতা হলে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তদন্তের আগে কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়া উচিত। আমরা কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নই। কিন্তু দোষী প্রমাণিত হওয়ার পর যাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
রীমার শারীরিক পরিস্থিতি ও তার চিকিৎসায় ডা. শামীমা সিদ্দিকী রোজীর নেওয়া পদক্ষেপগুলো সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন বিএমএ নেতা শরীফ। তার চিকিৎসকায় কোনো ধরনের অবহেলা হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
আপনারা মাত্র তিনজন চিকিৎসকের জন্য হাজার হাজার রোগীকে জিম্মি করে রেখেছেন। আর যারা অবহেলার কারণে মারা গেছেন তাদের স্বজনরা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন না— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে চিকিৎসক নেতারা বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হোক। কিন্তু এখানে তদন্ত ছাড়াই একজন স্বনামধন্য চিকিৎসককে কারাগারে পাঠিয়ে তার ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে।
বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করে বলেন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। উনারা উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছেন। আশা করি সমস্যার সমাধান খুব শীঘ্রই হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএমএ’র চট্টগ্রামের যুগ্ম সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. ইমরান বিন ইউনূস, অধ্যাপক ডা. নুরজাহান ভূইয়াসহ উপস্থিত ছিলেন।
(দ্য রিপোর্ট/এমএআর/সা/জানুয়ারি ২৩, ২০১৬)