অযত্ন-অবহেলায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি...’ ২১ ফেব্রুয়ারি ভোরে নগ্ন পায়ে হাজারও আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা এই গানটি গাইতে গাইতে ফুল হাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাবেন। শহীদদের স্মরণে-তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দুই-একদিন আগে ও পরে ছাড়া সারা বছরই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি পড়ে থাকে অবহেলিত অবস্থায়। দেখভাল করার যেন কেউ নেই।
এই সুযোগে ছিন্নমুল ও মাদক সেবনকারীরা তাদের নিরাপদ আখড়ায় পরিণত করে শহীদ মিনার চত্বরকে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, শহীদ মিনার এলাকাটি মাদক সেবন থেকে শুরু করে ভাসমান মানুষের মল ত্যাগের স্থানে পরিণত হয়েছে। এতে শহীদ মিনার এলাকার পবিত্রতা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। শহীদ মিনারের মাঝখানের লাল পর্দাটিও এখন নেই।
শহীদ মিনারের প্রবেশপথ মূল বেদিতে ‘জুতা পায়ে প্রবেশ নিষেধ’ এমন লেখা সংবলিত সাইনবোর্ড থাকা সত্ত্বেও সেখানে জনসাধারণ অবাধে বিচরণ করছে।
এ ব্যাপারে শহীদ মিনারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. এ এম আমজাদ আলী দ্য রিপোর্টকে বলেন, শহীদ মিনার একটি খোলা জায়গা। সেখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসে, গল্প করে, আড্ডা দেয়। সেভাবে সেখানে কোনো নিরাপত্তা দেওয়া নেই।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে শহীদ মিনারের পেছনের দেয়ালে বসে উঠতি বয়সের যুবক থেকে শুরু করে মধ্য বয়স্ক ব্যক্তিরা সিগারেট ও সিগারেটে গাঁজা ভরে সেবন করছেন।
শহীদ মিনার এলাকার চা বিক্রেতা আবদুল মালেক দ্য রিপোর্টকে জানান, সারাদিনই এখানে মাদকসেবীদের দেখা যায়। তারা সাধারণত বেদির পেছনের অংশে বসে গাঁজা সেবন করে।
তিনি জানান, শহীদ মিনারের পেছনে যে মাজার রয়েছে সেখানে কাজ করেন এমন কয়েকজন ব্যক্তি এখানে নিয়মিত গাঁজা বিক্রি করেন।
তিনি আরও জানান, রাত গভীর হলে এখানে নিয়মিত পতিতাবৃত্তিও চলে।
এ ব্যাপারে প্রক্টর ড. এ এম আমজাদ আলী দ্য রিপোর্টকে জানান, কিছু মানুষ মাঝে মাঝে হয়ত সেখানে যায়- এটা শুনেছি, তবে কোনো প্রমাণ পায়নি। প্রমাণ পেলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ ছাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বর্তমানে ছিন্নমূলদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ভাসমান মানুষের আনাগোনা বৃদ্ধি পায়। শহীদ মিনারের পেছনের জায়গায় তারা রাতযাপন করে থাকেন।
শহীদ মিনার এলাকার দোকানদার আব্দুল মালেক দ্য রিপোর্টকে বলেন, দিন দিন এমন মানুষদের আনাগোনা বেড়েই চলেছে। তারা শহীদ মিনারকে একটা স্থায়ী জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছে।
জানা যায়, শহীদ মিনার রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য দুই বছর আগে সুপ্রিমকোর্ট তিনজন নিরাপত্তাকর্মী ও তিনজন পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগের নির্দেশ দেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে। কিন্তু আজও সেই নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি।
শহীদ মিনারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. এ এম আমজাদ আলী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন তিনজন নিরাপত্তাকর্মী ও তিনজন পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ দিলেও তারা নিয়মিত থাকেন না।
তিনি বলেন, নিরাপত্তাকর্মীরা নিয়মিত না থাকায় মোবাইল বাহিনী শাহবাগ থানাকে অবগত করেছে।
এদিকে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে মোবাইল বাহিনী তাদের কোনো কিছুই জানায়নি। তিনি আরও জানান, শহীদ মিনার বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে রয়েছে।
এদিকে মহান ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে এখনও কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে প্রক্টর বলেন, প্রতিবছর চারুকলার শিক্ষার্থীদের দিয়ে শহীদ মিনারের কাজ করানো হয়। কিছু দিনের মধ্যেই সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে।
(দ্য রিপোর্ট/জেএইচ/এসবি/শাহ/জানুয়ারি ৩১, ২০১৪)