চট্টগ্রাম অফিস : মামলার তথ্য গোপন করে তিন কর্মচারীকে অবসর সুবিধা দিয়েছে চট্টগ্রাম বন গবেষণা ইনস্টিটিউট। অভিযোগ উঠেছে, অনৈতিক উপায়ে মামলা চলাকালীন ওই তিন কর্মচারীকে অবসর সুবিধা পেতে সহায়তা করে বন গবেষণা কর্তৃপক্ষ। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার পরেও তারা অবসর সুবিধা বাবদ প্রায় অর্ধকোটি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে উত্তোলন করেন।

ওই তিন কর্মচারী হলেন— চট্টগ্রাম মহানগরীর ষোলশহরে অবস্থিত বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান সহকারী আবুল কালাম, অফিস সুপারিটেনডেন্ট আহসান হায়দার, ডকুমেন্টেশন সহকারী খোরশেদ আলম মজুমদার। অবসরের এসব টাকা উত্তোলনে সহযোগিতা করেন— বন গবেষণার প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বদিউজ্জামান, পে-অফিসার রেজাউল করিম ও বিভাগীয় কর্মকর্তা (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম।

তবে বিষয়টি অবগত নন বলে জানান বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. শাহিন আক্তার। ওই তিন কর্মচারীর অবসর ফাইল কীভাবে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে তার স্বাক্ষরে গেল— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিম্ন দফতর থেকে অনাপত্তি পাওয়ায় তাদের ফাইলে স্বাক্ষর করা হয়।

বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ঢাকাস্থ প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও দফতরে কর্মরত অডিটর বকুল (ডাকনাম) বলেন, চট্টগ্রাম থেকে এ ব্যাপারে কোনো আপত্তিপত্র না আসায় আমরা অবসর সুবিধা প্রদান করেছি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর ষোলশহরে অবস্থিত বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান সহকারী আবুল কালাম, অফিস সুপারিটেনডেন্ট আহসান হায়দার, ডকুমেন্টেশন সহকারী খোরশেদ আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নগরীর পাঁচলাইশ থানায় পাহাড় কাটা ও সরকারি জমি দখলের অভিযোগে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়।

চান্দগাঁও ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হাফেজ আহমেদ বাদী হয়ে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা (০৬/২/০৭) দায়ের করেন। এরপর ওই তিন কর্মকর্তা গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন।

সরকারি চাকরিবিধি মতে, কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভাগীয় অথবা ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারান্তরীণ হলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে হয়। কিন্তু ওই তিন কর্মকর্তার ব্যাপারে তা করেনি কর্তৃপক্ষ। উল্টো কারাগারে থাকাকালীন তারা পূর্ণ বেতন সুবিধা ভোগ করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপর জামিনে এসে তারা পুনরায় কাজে যোগ দেন।

সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে আবুল কালাম ২০০৯ সালে, আহসান হায়দার ২০১৩ সালে এবং খোরশেদ আলম মজুমদার ২০১৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। ওই তিন কর্মকর্তার প্রত্যেকেই প্রায় ১৫ লাখ টাকার উপরে অবসর সুবিধা উত্তোলন করেন। যার পরিমাণ প্রায় অর্ধকোটি টাকার কাছাকাছি।

সুনির্দিষ্ট মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে থাকার পরেও কেন তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়নি— এমন প্রশ্নের জবাবে বিভাগীয় কর্মকর্তা (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি কোনো পক্ষ তাকে অবহিত করেনি। এ ছাড়া নিচের সকল দফতর থেকে অনাপত্তি পাওয়ার পরই তাদের ফাইল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়।

বন গবেষণা কেন্দ্রের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গবেষণা ইনস্টিটিউটের বড় কর্তারা মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণ করে ওই তিনজনকে অবসর সুবিধা প্রদানে সহায়তা করেন।

অবসর গ্রহণকারী প্রধান সহকারী আবুল কালাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, কর্তৃপক্ষ কিভাবে আমাদের সরকারি অবসর সুবিধা প্রদান করেছে তা তাদের ব্যাপার, আমাদের জানা নেই।

বিষয়টি নিয়ে গবেষণা ইনস্টিটিউটে কর্মরত কর্মচারীরাও হতবাক বলে জানান কয়েকজন। এ ব্যাপারে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বদিউজ্জামানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, তিনজনের মামলার বিষয়ে কেউ আমাকে লিখিত বা মৌখিকভাবে অবহিত করেননি। কেউ যদি আমাকে না জানায় বা কোনো বিষয় গোপন করে সেক্ষেত্রে আমার করার কিছু থাকে না।

(দ্য রিপোর্ট/এমএআর/সা/জানুয়ারি ২৫, ২০১৬)