ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার উদ্বোধন ৩০ জানুয়ারি
সাইফুল ইসলাম শিল্পী, চট্টগ্রাম : বিশ্বমানের বাণিজ্যিক কেন্দ্র ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে যুক্ত হয়েছে বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। আগামী ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম একমাত্র ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার উদ্বোধন করবেন।
এর মাধ্যমে বিশ্বের ৩২৭টি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হচ্ছে বন্দরনগরী। একই ছাদের নিচে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পাদনের জন্য ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের জুড়ি নেই। পাশের দেশ ভারতে ১৪টি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার রয়েছে। পাকিস্তানে রয়েছে তিনটি।
বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদে এটি নির্মাণ করেছে চিটাগাং চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। ২৪ তলাবিশিষ্ট ভবনটি নির্মাণে খরচ হয় প্রায় ২০০ কোটি টাকা। চিটাগাং চেম্বারে নিজস্ব অর্থায়নে এটি নির্মিত হয়েছে। এই সেন্টারে থাকছে ৫ কোটি টাকায় নির্মিত বাংলাদেশের রপ্তানিপণ্যের বিশালাকারের প্রদর্শনী কেন্দ্র। দেশের ১৩৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের প্রদর্শনী থাকবে এই কেন্দ্রে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, ৯১ থেকে ৯৬ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া চট্টগ্রামের ব্যবসায়িদের অনুরোধে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার নির্মাণের জন্য ৭৫ কাঠা জমি এক টাকায় (প্রতীকী মূল্যে) চিটাগাং চেম্বারের কাছে হস্তান্তর করেছিলেন। জমি প্রদানের পর ট্রেড সেন্টারের পাশের একটি জমি ওয়ার্ল্ড সেন্টারের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশ রেলওয়ের এ জমিটি পাওয়া নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রেলওয়ের সে জমিও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নামে প্রদানের ব্যবস্থা করেন। ২০০৬ সালে তিনি ওয়ার্ল্ড সেন্টার নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।
জানা যায়, এই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উচ্চতা প্রায় ৯১ মিটার বা ২৯৮ ফুট। যেটি দেশের একমাত্র বাণিজ্যিক কেন্দ্র। বর্তমানে এটি চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ ভবনও। তিনটি বেসমেন্ট ও ২৪তলা বিশিষ্ট ভবন। নিচতলায় ব্যাংক ও অস্থায়ী এক্সিবিশন হল। দ্বিতীয় তলায় ব্যাংক, শপিংমল ও ফুডকোর্ট এবং তৃতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় অফিসপাড়া, চতুর্থ তলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী এক্সিবিশন হল, পঞ্চম তলায় আইটি জোন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইনস্টিটিউট, সভাকক্ষ ও মিডিয়া সেন্টার, অষ্টম তলায় হেলথক্লাব, ব্যাংকুইট হল ও স্নোকার রুম, নবম তলায় টেনিস কোর্ট, সুইমিংপুল ও কনফারেন্স রুম এবং ১০ থেকে ২০তলা পর্যন্ত থাকছে পাঁচ তারকা হোটেল আর ২৪তলায় হেলিপ্যাড সুবিধা। পাঁচ তারকা হোটেল হিসেবে বিশ্ববিখ্যাত চেইন হোটেল গ্রান্ড হায়াতের সঙ্গে চুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে চট্টগ্রাম চেম্বার কর্তৃপক্ষ।
চিটাগাং চেম্বার সূত্রে জানা গেছে, ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার উদ্বোধনের পাশাপাশি ওইদিন চট্টগ্রাম চেম্বারের শত বর্ষপূর্তি উৎসবেরও উদ্বোধন করবেন। চেম্বার নেতাদের মতে দেশে প্রথমবারের মতো কোনো ব্যবসায়ী সংগঠন শত বর্ষপূর্তি উদযাপন করছে। তাই শুধু চট্টগ্রাম নয়, বিশ্ববাসীর কাছে এই দুই অর্জন স্মরণীয় করে রাখতে পাঁচ দিনের জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে চট্টগ্রাম চেম্বার।
বুধবার সকালে এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম চেম্বার নেতৃবৃন্দ পাঁচ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও শতবর্ষ উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান এম এ লতিফ এমপি দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘চেম্বারের শতবর্ষ উদযাপন এবং ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের শুভযাত্রা স্মরণীয় করে রাখতে পাঁচদিন ব্যাপী জমকালো ও ব্যতিক্রমী কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। বিশ্বের স্বনামধন্য চেম্বার ও শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে অনুষ্ঠানসূচি সাজানো হচ্ছে ‘।
তিনি জানান, কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের পর্যটন খাতের অমিত সম্ভাবনা সরেজমিন বিদেশিদের কাছে তুলে ধরতে বিদেশি ব্যবসায়ীদের সরাসরি নিয়ে যাওয়া হবে রাঙামাটির মনোরম হ্রদে। ভ্রমণের পাশাপাশি সেখানে দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ট্যুরিজম কনভেনশনে চট্টগ্রামের সৌন্দর্য তুলে ধরা হবে। একইসঙ্গে হেলিকপ্টারে বিদেশিদের বান্দরবান, কক্সবাজার ও সুন্দরবনের অপরূপ দৃশ্য দেখানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এমএ লতিফ বলেন, ‘আমরা ব্যবসা-বাণিজ্যেও হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারক। সাড়ে ৩০০ বছর আগে চট্টগ্রামে তৈরি জাহাজ ফ্রিগেট অব ডয়েজল্যান্ড এখনো জার্মানির জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে। এই ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে চট্টগ্রাম বন্দরে তিনটি বিশেষ জাহাজ আকর্ষণীয়ভাবে প্রদর্শন করা হবে।’
এছাড়া ৫ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার কর্মসূচি শুরু হয়েছে আজ ২৭ জানুয়ারি থেকে কাল বুধবার লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো হবে পোর্ট স্টেডিয়াম থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত। ৩০ জানুয়ারি বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উদ্বোধন করবেন। ৩১ জানুয়ারি সকালে র্যাডিসন ব্লু হোটেলে আন্তর্জাতিক বিজনেস কনফারেন্স ও বিকেলে ইয়ুথ কনফারেন্স, ১ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির আরণ্যক কটেজে ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম সামিট এবং ২ ফেব্রুয়ারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে।
‘এ ছাড়া দেশি-বিদেশি অতিথিদের নিয়ে একটি বিজনেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে চট্টগ্রামসহ পুরো বাংলাদেশের নানা সম্ভাবনা তুলে ধরা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে একটি ইয়ুথ কনফারেন্স। এতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হবে। আরও থাকছে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও রোডশো। যেখানে চট্টগ্রামের শত বছরের ইতিহাস, বর্তমান চিত্র এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা স্থান পাবে। থাকবে চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে বিদেশি নাবিক ও ব্যবসায়ীদের চট্টগ্রাম আগমনের চিত্র। প্রকাশিত হবে একটি স্মারকগ্রন্থও।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘কোনো ধরনের ব্যাংকঋণ ছাড়াই প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার নির্মাণ করে আমরা প্রমাণ করেছি আন্তরিকতা থাকলে ভালো কিছু করা সম্ভব। এটি হবে দেশের গর্ব। যা বেসরকারি উদ্যোক্তাদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।
(দ্য রিপোর্ট/এসবি/এইচ/জানুয়ারি ২৭, ২০১৬)