চট্টগ্রাম অফিস : ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের (সিটিভি) অনিয়ম দুর্নীতি অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে’ বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রামের শিল্পী সমাজ।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে বৃহস্পতিবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রামের শিল্পী, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার, নাট্যকার ও যন্ত্রশিল্পীরা অভিযোগ করেন, ‘সিটিভি এতই অনিয়মে ভরপুর হয়েছে যে, এখানে কোনো সরকারি নীতিমালার বালাই নেই।’

বক্তারা বলেন, ‘চট্টগ্রাম কেন্দ্রকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ছয় ঘণ্টা অনুষ্ঠান সম্প্রচার এবং এটিকে স্বতন্ত্র চ্যানেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ৩৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। দুঃখের বিষয়, একটি চক্র বর্তমান জি এম জাঁ নেসার ওসমানের সহযোগিতায় গণমাধ্যমটিতে হরিলুট করছে।’

শিল্পীরা অভিযোগ করেন, ‘বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রটি রাজস্ব খাতে যাচ্ছে না। বাড়ছে না এর সম্প্রচার পরিধিও।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চট্টগ্রাম বেতার ও টেলিভিশন শিল্পী কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন তাহের বলেন, ‘১৯৯৭ সালে শুরুর পর থেকেই কিছু লোকের আখের গোছানোর মানসিকতা ও ঔদাসিন্যতার কারণে বাংলাদেশ টেলিভিশনের চট্টগ্রাম কেন্দ্রটি চট্টগ্রামবাসীর আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।’

তার অভিযোগ, ‘প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পেরিয়ে গেলেও চট্টগ্রাম টিভি এখনো পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন কেন্দ্রের রূপ লাভ করতে পারেনি।’

চট্টগ্রাম কেন্দ্রের শিল্পীদের নানা বঞ্চনার কথা তুলে ধরে তাহের বলেন, ‘আমাদের পরিষ্কারভাবে বুঝে নেওয়া দরকার, এটি বিটিভি না, আলাদা টিভি। যদি এক হবে তাহলে এখানকার তালিকাভুক্ত শিল্পীরা ঢাকা কেন্দ্রে অনুষ্ঠান করতে পারছে না কেন? বাংলাদেশ বেতারে তো পারে। একটি ছাড়পত্র নিয়ে যেকোনো কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারেন একজন তালিকাভুক্ত শিল্পী।’

তিনি বলেন, ‘দেড় দশক অতিবাহিত হলেও চট্টগ্রাম কেন্দ্রে আজও শিল্পী তালিকাভুক্তির জন্য অডিশন গ্রহণ করা হয়নি। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের শিল্পীদের প্রাণের এই দাবি এখনো পূরণ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ শিল্পীরা এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অডিশনের দাবি করছেন, দাবি করছেন গ্রেডেশনেরও।’

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, বাংলাদেশ টেলিভিশনের দুটি কেন্দ্র ঢাকা ও চট্টগ্রামে শিল্পীদের সম্মানী পরিশোধ করার জন্য নির্দিষ্ট শিল্পী সম্মানী কাঠামো থাকলেও তা ব্যত্যয় হচ্ছে, রয়েছে ব্যাপক তারতম্য।

শিল্পীরা বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমরা চট্টগ্রামের শিল্পী, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালকরা নিজেদের এক হাজার পাঁচ শ’ টাকার বিনিময়ে বাইরের স্টুডিও থেকে একটি গান রেকর্ড করে চার মাস পর গিয়ে গ্রেড অনুযায়ী ৭০০ থেকে ১২০০ টাকার সম্মানী চেক পেতাম। একটি কুচক্রী মহল এই কেন্দ্রের বরাদ্দ অর্থ লুটপাট করে খাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে, যা চট্টগ্রামবাসীর জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক।

তারা বলেন, গেল চার মাস আগে সুরকার, সঙ্গীত পরিচালকদের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধের ওই টাকা দিয়ে জিএম’র নিয়োগপ্রাপ্ত প্রযোজক, এডিটর সহযোগীদের বেতন দেওয়া হয়।

তারা আরও অভিযোগ করেন, সম্প্রতি একটি দৈনিকে জি এম জাঁ নেসার ওসমানের বিশাল আকারে সাক্ষাৎকার এসেছে। ওখানে উনি অনেক কথা বলেছেন, যার অর্ধেক মিথ্যা আর সাজানো। উনি বলেছেন, একঝাঁক তরুণ-তরুণীর হাতে এই কেন্দ্র তুলে দিচ্ছেন। উনার কিছু চাটুকার তরুণের সঙ্গে একঝাঁক কোমলমতি তরুণী এখন টিভিকেন্দ্রে ঘোরাঘুরি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- সভাপতি কায়সারুল আলম, সহ-সভাপতি শেখ শহীদুল আনোয়ার, সহ-সভাপতি মো. মোস্তফা কামাল, সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন তাহেরসহ সংগঠনের অন্য নেতারা।

(দ্য রিপোর্ট/জেএস/এমএআর/এম/জানুয়ারি ২৮, ২০১৬)