ইমরান হোসাইন, চবি প্রতিনিধি : চতুর্থ সমাবর্তন উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সাজসাজ রব। নানা রঙে, নানা সাজে সেজে উঠেছে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিভাগ ও কার্যালয়। গ্র্যাজুয়েটদের বরণ করে নিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন চলছে উৎসবের আমেজ।

চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেবেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান।

চতুর্থ সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করছেন ৭১৯৪ জন গ্র্যাজুয়েট। চবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে রবিবার দুপুর আড়াইটা থেকে শুরু হবে সমাবর্তনের মূল আয়োজন।

কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ও ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। ক্যাম্পাস ইতোমধ্যে গ্র্যাজুয়েটদের পদচারণায় মুখরিত। গ্র্যাজুয়েটরা মেতে উঠেছেন সেলফি-ফটোসেশন, স্মৃতিচারণ আর হইহুল্লোড়ে।

সবুজ পাহাড়ে ঘেরা ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ ভবন, স্থাপনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসহ বিভিন্ন রঙে বর্ণিলরূপে সাজানো হয়েছে পুরো ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট, সোহরাওয়ার্দী মোড়, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, প্রশাসনিক ভবন সাজানো হয়েছে বাহারি রঙের বাতিতে। সমাবর্তনের অনুষ্ঠানস্থল কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। মাঠের পশ্চিম পাশে বানানো হচ্ছে হেলিপ্যাড। প্রস্তুত করা হচ্ছে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রবিবার হেলিকপ্টারে নেমে সরাসরি যোগ দেবেন মূল অনুষ্ঠানে।

এদিকে সমাবর্তনের নিবন্ধন ফি বেশি নেওয়ার অভিযোগ করেন গ্র্যাজুয়েটরা। গ্র্যাজুয়েটদের অভিযোগ, অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধুমাত্র একটি নিবন্ধনের মাধ্যমে দেওয়া হয় অনার্স ও মাস্টার্সের সনদপত্র। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনার্স ও মাস্টার্সের জন্য আলাদা করে নিবন্ধন করতে বলেছে। অনার্স ও মাস্টার্সের নিবন্ধনের জন্য নেওয়া হয়েছে দুই হাজার করে মোট চার হাজার টাকা।

এদিকে সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, নির্দিষ্ট অঙ্কের ফি নেওয়ার পরেও সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী গ্র্যাজুয়েটদের গাউনের সঙ্গে দেওয়া হয়নি সমাবর্তন টুপি ও টাই। অপরদিকে সমাবর্তনে নিজেদের উদ্যোগে কেনা টুপি পরেও কেউ সমাবর্তনস্থলে ঢুকতে পারবেন না বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সমাবর্তনে টুপি ও টাই না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্র্যাজুয়েটরা।

সমাবর্তনে অংশ নেওয়া কামরুল হাসান নয়ন বলেন, ‘লুঙ্গির সাথে স্যুট-টাই পড়লে যতটা বিদঘুটে লাগবে, ক্যাপ-টাই ছাড়া সমাবর্তনের গাউন পরলে ঠিক ততটাই বিদঘুটে দেখাবে! চবির চতুর্থ সমাবর্তনে ক্যাপ-টাই দেওয়া হচ্ছে না, শুধু গাউন দেওয়া হচ্ছে! পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো সমাবর্তন কি হয়েছে যেখানে ক্যাপ দেওয়া হয়নি?’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সমাবর্তন আয়োজন কমিটির প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামরুল হুদা দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফের ডটকমকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে টাই ও টুপি দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। যদি টাই ও টুপি দিতে হয় তাহলে সিনেটের মাধ্যমে তা পাস করাতে হয়।’

এদিকে সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের সুবিধার্থে শাটল ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরিবর্তিত সময়সূচি অনুযায়ী শুধুমাত্র সমাবর্তনের দিন শাটল ট্রেন চলাচল করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তথ্য) মো. ফরহাদ হোসেন খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

শাটল ট্রেনের পরিবর্তিত সময়সূচি হলো চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে ক্যাম্পাস অভিমুখে ট্রেন ছাড়বে সকাল ৭টা, সাড়ে ৭টা, সাড়ে ৮টা, সাড়ে ৯টা, সাড়ে ১০টা, বিকাল ২টা ১০ মিনিটে ও রাত সাড়ে ৮টায়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন অভিমুখে ট্রেন ছাড়বে- সকাল ৮টা ২০ মিনিটে, ৮টা ৫০ মিনিটে, সকাল ১০টায়, বিকেল ৫টায়, সন্ধ্যা ৬টায়, সন্ধ্যা ৭টা ও রাত সাড়ে ৯টায়।

সমাবর্তনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জারি করা হয়েছে বিশেষ সতর্কতা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ৩১ জানুয়ারি রবিবার অনুষ্ঠিতব্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যবস্থার আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোয় বৈধ বরাদ্দপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যদের হলে অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। হলগুলোয় অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া হল থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, রিকশাসহ সব ধরনের যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানরত সব শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীকে নিজ নিজ পরিচয়পত্র সঙ্গে বহন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কলা অনুষদের ঝুপড়ি ছাড়া ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাস সংলগ্ন সব দোকান বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমাবর্তন ভেন্যুতে আমন্ত্রিত অতিথি ও কনভোকি ছাড়া অন্যদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সমাবর্তনের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেট থেকে অটোরিকশা চলাচল বিকেল ৫টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়াও স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সেস (এসএসএফ) এবং পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চসহ (এসবি) আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা সন্দেহজনক যে কাউকে আটক, জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করার ক্ষমতা রাখবেন বলেও এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর লিটন মিত্র দ্য রিপোর্টকে জানান, সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে ১৩ শ’ পুলিশসহ মোট আড়াইহাজার নিরাপত্তাকর্মী থাকবে। পুরো ক্যাম্পাস থাকবে নিরাপত্তার চাদরে মোড়া। সমাবর্তনস্থলের চারপাশ নিরাপত্তাকর্মীদের দ্বারা ঘিরে ফেলা হবে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো সিসি ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।

১৯৬৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর একবার বিশেষ সমাবর্তনসহ মোট চার বার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৯ সালের ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তন। সর্বশেষ ২০০৮ সালের ৫ নভেম্বর তৃতীয় সমাবর্তন হয়। এছাড়া ১৯৮১ সালের ১৮ জানুয়ারি একবার বিশেষ সমাবর্তন হয়।

(দ্য রিপোর্ট/জেএস/এপি/সা/জানুয়ারি ৩০, ২০১৬)