শেখর দেব-এর চারটি কবিতা

বিচিত্রবীর্যের উঠোন
মানুষের অন্তর্গত বিস্ময়ের খোঁজে
বিপন্ন প্রেমের ঘরদোর ভেঙে
বিপুল পৃথিবীর অন্তরে
মেলেছি সভ্যতার অপার ডানা।
বিরল বিয়োগ আর বন্ধুর সময় হতে
মাথা তুলে বিশুদ্ধ মানুষ
পাল্টে নিয়েছি নিয়মের নমিত সুর।
নির্বোধ নিনাদ হতে
ক্রমশ সরেছি দূরে
করেছি আলাদা খুব আপন স্বভাবে।
মুখের কথায় যারা বুঝে না পথিক
পথের ইশারা তার অবুঝ আঁধার!
প্রেয়সী মনের ধাঁধাঁ অলীক প্রজ্জ্বল
হারাবার পথ হতে ফিরে আসি ঘরে
উঠোনের মায়াপুরে বিচিত্রবীর্য এক
জৌলুসে যৌবন সঁপে অসীম অঙ্গার।
প্রমাদের ফুল ছিঁড়ে
মুক্ত মানুষের দেশ গড়েছি সহসা
নিজের ভেতর ভেঙে নিয়মের ঘর।
প্রণয়ের প্রাণ
অন্তহীন বয়ে যায় বেদনার বাতাস। খুব আশ্চর্য সুরের মাঝে বেড়ে ওঠা বেলা হতে হারানো আমোদ খুঁজতে গিয়ে পেয়ে যাই অব্যক্ত কোন মুক্ত। যার ঝলকানি লেগে একবার স্বর্গ নামক বিভ্রম হতে হয়েছি চ্যুত। এভাবে কেটে গেলে কাল অনির্বাণ বাণে বিদ্ধ হবার থাকে না ভয় । তবুও সংসার নামক কোন জাগ্রত আগুনে পুড়ে পুড়ে যদি চাও নির্বাণেরও কিছু অধিক। তবে মনের জলে দাও ভালোবাসার ঢেউ। ভালোবাসা-শুদ্ধতার ভেতর কেন জুড়ে দাও নিঃশব্দ ব্যথার নহর। কথার ব্যথা ফেলে চলো আদরের মুক্ত ছড়িয়ে রচনা করি প্রণয়ের প্রার্থিত প্রাণ।শান্তি শোভাময়
খেলার ভেলা দিও না ভাসিয়ে- উতল মনের অনিশ্চিত জলে। জলের গভীরে হারালে কে তোমায় দেখাবে সৌন্দর্যের শোভা। তুমি যদি চাও হৃদয় নিঙড়ে বানিয়ে দেব সঞ্জীবনী শুধা। ভালোবাসার স্কুলে তোমার একলব্য হয়ে দিতে পারি আঙুলের বদলে হৃদয়-দক্ষিণা। আঙুল-জাদুর তুষ্টি নিয়ে বাতাসে ছেড়ে দিতে পারবে নির্বাণের নিশ্বাস।
কথার ছুঁতো ঝলঝলে করে কষ্ট নিও না মনে। অপার আকাশের নিচে সুখের নিশ্বাস নিয়ে চলে যেতে পারো বিস্তৃত সবুজের ভেতর। খুঁজে পাবে শান্তির সুরায় আকাশ কীভাবে থাকে নির্মল মেঘহীন। বৃক্ষের বোধ না বুঝে বোধির পাবে না সন্ধান। জানো- বোধিবৃক্ষের নিচে পেয়েছিলাম ভালোবাসার নির্বাণ। শান্তি শান্তি শান্তি শোভাময়।
নির্দলীয় মেঘ
রাস্তাগুলো ক্রমাগত মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে নিবিড় গতির ভেতর। পাক খেতে খেতে উল্টে যায় মগজের সমস্ত নিউরন। বাতাসে বিভোর কাগজের অবিকল ওড়ে যায় প্রেমাসক্ত খামগুলো, যার ভেতর বেদনার তীব্র অক্ষর লাইনচ্যুত হয়ে ছড়িয়ে যায় এলোমেলো। তুমি শীতনিদ্রার ঘোরে ঝিম মেরে থাকা কাছিম গুটিয়ে নিয়েছ সম্পূর্ণ মায়ার অনুরাগ।
হৃদয় আজ নিপুণ পেট্রোল বোমা, পুড়ে অঙ্গার নিরাপদ নিয়তির শরীর। পথের ক্ষত বুকে নিয়ে ক্লান্ত পাগল প্রাণ কাঁদে শিহরণ জাগে চিরন্তন। কতোবার ডাকলে দিবে সাড়া- বলে যাবে চলো- আবার চলো যুগপৎ শিরার শিহরণে তুলে নিয় স্বর্গীয় আমেজ। এসবের মাঝে নির্দলীয় মেঘ উড়ে উড়ে আসে নতুন ভুবনে। চলো এসব ঘটনাবহুল হন্তারক সময় ছাড়িয়ে গড়ে তুলি মগ্নকাল যার কাছে সঁপে দিতে পারি বাকিটা মনন।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/এসআর/ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৬)