ডায়াবেটিক কোমা : সতর্ক থাকুন
আকিব যুবাইর : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ডায়াবেটিস বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশেরও বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। এর প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই টাইপ-২ ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য একটি মারাত্মক অবস্থা হলো ডায়াবেটিক কোমা। ডায়াবেটিক কোমার কারণে যে কোনো অঙ্গের ক্ষতিসহ মৃত্যুও হতে পারে।
ডায়াবেটিক কোমা কী এবং কেন হয়?
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি বেড়ে গেলে অথবা খুব কমে গেলে রোগী কোমায় চলে যায়। এ অবস্থাটাই ডায়াবেটিক কোমা। এর জন্য দুটি অবস্থা দায়ী- রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রা থেকে কমে যাওয়া বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া ও স্বাভাবিক মাত্রা থেকে বেড়ে যাওয়া বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া।
১. হাইপোগ্লাইসেমিক লক্ষণ :
হঠাৎ দুর্বলতা, মাথাব্যথা, অতিরিক্ত ঘাম, শরীর কাঁপা, অবসাদ, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা কিংবা একটি বস্তুকে দুটি দেখা, হঠাৎ ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়া।
হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণ :
খাবার খেতে ভুলে যাওয়া, সময়মতো না খাওয়া অর্থাৎ দেরি করা কিংবা প্রয়োজন অনুযায়ী না খাওয়া। গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু ৮০ শতাংশ হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয় এ কারণে। এ ছাড়া হাইপারগ্লাইসেমিয়ার জন্য অতিরিক্ত ইনসুলিন নেওয়া বা ট্যাবলেট খাওয়া, অতিরিক্ত ব্যায়াম বা ভারী কাজ করা, অতিরিক্ত মদ্যপান ও বমি বা পায়খানার সঙ্গে খাবার বেরিয়ে যাওয়া।
যা করতে হবে-
যেহেতু হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয় গ্লুকোজ ঘাটতি বা কমে যাওয়ার কারণে, তাই এ সময় প্রধান ও একমাত্র করণীয় দ্রুত শর্করা বা গ্লুকোজের মাত্রাকে উচ্চ বা স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসা। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব ১০-১৫ গ্রাম সহজ শর্করা গ্রহণ করতে হবে। সহজ শর্করা পাওয়া যায় এক থেকে দুই চা চামচ চিনি বা মধু বা গুড়, দুই থেকে চারটি গ্লুকোজ ট্যাবলেট, দুই থেকে চারটি ক্যান্ডি কিংবা গ্লাসের অর্ধেক বা চার ভাগের তিন ভাগ ফলের রস বা চিনির শরবতে।
খাওয়ার ১৫ মিনিট পর রক্তের সুগার মাপতে হবে। যদি সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে না আসে তবে আবার একই ভাবে ১০ থেকে ১৫ গ্রাম শর্করা গ্রহণ করতে হবে এবং ১৫ মিনিট পর রক্তের সুগার মাপতে হবে। যদি এতেও স্বাভাবিক মাত্রায় না আসে তবে হালকা স্ন্যাক্স খেতে হবে। এত কিছুর পরও রক্তের সুগার স্বাভাবিক না হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে জোর করে মুখে কিছু দেওয়া ঠিক হবে না। এ অবস্থায় দাঁত ও গালের মাঝখানে চিনিজাতীয় কিছু ঘঁষে দেওয়া যেতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে শিরাপথে গ্লুকোজ দেওয়াই হচ্ছে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা।
২. হাইপারগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ :
পিপাসা বেড়ে যাওয়া, জিহ্বা শুষ্ক লাগা, বার বার প্রস্রাব হওয়া, দুর্বলতা, ঝিম ঝিম ভাব, মাথাব্যথা, কথা বলতে না পারা, অস্থিরতা ও প্যারালাইসিস।
হাইপারগ্লাইসেমিয়ার কারণ :
ওষুধ খেতে ভুলে যাওয়া, সময়মতো না খাওয়া, অর্থাৎ দেরি করা কিংবা প্রয়োজন অনুযায়ী না খাওয়া। ইনসুলিন বা ওষুধের তুলনায় বেশি শর্করাজাতীয় খাবার বা গ্লুকোজ খাওয়া। পরিমিত ব্যায়াম না করা। এ ছাড়া ইনফেকশনের কারণেও হাইপারগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।
যা করতে হবে-
হাইপারগ্লাইসেমিয়া কিংবা এর কারণে ডায়াবেটিক কোমা হলে যত দ্রুত সম্ভব রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এ জন্য রোগীকে ইনসুলিন দিতে হবে। যদি রক্তের গ্লুকোজ স্বাভাবিক মাত্রায় না আসে তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শিরাপথে ফ্লুইড দিতে হবে, যা দেহে পানির পর্যাপ্ততা ফিরিয়ে আনবে। এ ছাড়াও কোষীয় কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য শিরাপথে সোডিয়াম, পটাশিয়াম বা ক্লোরিন দেওয়া যেতে পারে।
ডায়াবেটিক কোমা প্রতিরোধ করা সহজ। সঠিক ডায়েট, শরীরচর্চা ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা ডায়াবেটিককে নিয়ন্ত্রণে রাখে। আর নিয়ন্ত্রণে থাকলে ডায়াবেটিক কোমার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। প্রয়োজন শুধু সতর্কতা ও সচেতনতার।
লেখক: শিক্ষার্থী