চট্টগ্রামের লোক সংস্কৃতি উৎসব শেষ
চট্টগ্রাম অফিস : বন্দর নগরী চট্টগ্রামে লোক সঙ্গীত, নৃত্য, ভাওয়াইয়া গান, আঞ্চলিক, মাইজভাণ্ডারি, লালনসহ বিভিন্ন অঞ্চলের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দু’দিনব্যাপী লোকসংকৃতি উৎসব।
‘জ্বালাও আলো, আপন আলো’ স্লোগান ধারণ করে শুক্রবার বিকেল থেকে প্রতি বছরের ন্যায় উৎসবের আয়োজন করে চট্টগ্রামের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিবিষয়ক গবেষণা সংগঠন সমাজ সমীক্ষা সংঘ।
সমাপনী দিনে শনিবার বিকেলে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম. নাছির উদ্দিন, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন এবং ফর ইস্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহাদাত হোসেন।
আলোচকরা বলেন, আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন আর প্রলোভনের যুগে লোকসংস্কৃতি আজ হুমকির মুখে। এ অঞ্চলের মানুষের শত শত বছরে লোকায়ত সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে হবে। এ জন্য নতুন প্রজন্মসহ সব স্তরের মানুষকে নিজের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য জানতে ও তা লালন করতে হবে।
আয়োজকরা বলেন, এবারের আয়োজনের উদ্দেশ্য হচ্ছে আরও একবার নিজের মাটির দিকে ফিরে তাকানো এবং আত্মপরিচয়ের সংকট দূর করা।
উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান আবু তাহের মাসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের পরিচালক শিহাব চৌধুরী বিপ্লব। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংগঠনের পরিচালক সাইফুদ্দিন মিনহাজ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু। পরিচালনায় ছিলেন আবুল হাসনাত মো. বেলাল।
আলোচনা সভা শেষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরস্কার প্রদান করেন কবি আবুল মোমেন।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মাইজভাণ্ডারি গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্বের আয়োজন। পরিবেশন করেন সৈয়দ মানিক। গানের সঙ্গে ঢোলের বাদ্যে প্রাণ সঞ্চার ঘটে পুরো ডিসি হিল প্রাঙ্গণে।
এরপর গান পরিবেশন করেন নেত্রকোণা থেকে আসা শিল্পী মিলন বয়াতী ও তার দল। গানে ও অভিনয়ে বাংলার আদি সাহিত্য ময়মনসিংহ গীতিকা থেকে নেওয়া কমলা রানীর পালা মঞ্চস্থ করেন তারা। বোতল নৃত্য পরিবেশন করেন খাগড়াছড়ি থেকে আগত ইয়ামুক শিল্পী গোষ্ঠী।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান পরিবেশন করেন জনপ্রিয় শিল্পী কল্যাণী ঘোষ। বাংলার বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের গান পরিবেশন করেন সিলেট থেকে আগত শিল্পী আব্দুর রহমান। ধামাইল নৃত্য পরিবেশন করেন সুনামগঞ্জ থেকে আগত লোক দল শিল্পী গোষ্ঠী।
এরপর মঞ্চে আসেন কুষ্টিয়া থেকে আগত বাউল শফি মণ্ডল। গানে গানে তিনি বাংলার প্রাণ পুরুষ ফকির লালন শাহের অসম্প্রদায়িক ভাবনা, মানুষের কথা, সম্প্রীতির কথা শুনিয়ে যান।
এরপর মধ্যরাতে ঢোলের তালে তালে আতসবাজি, ফানুস উড়ানোর মধ্য দিয়ে দুই দিনের ৫ম লোক সংস্কৃতি উৎসবের বর্ণিল সমাপ্তি ঘটে।
(দ্য রিপোর্ট/এএ/আর/এনডিএস/এইচ/ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৬)