হরতাল প্রত্যাহার করুন, আলোচনার পথ খোলা : প্রধানমন্ত্রী
দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : বিরোধীদলীয় নেত্রীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও বলেছেন, হরতাল প্রত্যাহার করুন, আলোচনার পথ খোলা আছে। তিনি বলেন, আমি সংলাপের প্রস্তাব দিলাম উনি (খালেদা জিয়া) প্রত্যাখ্যান করে হরতাল দিলেন। হরতাল দিয়ে উনি কী পেলেন। ২০ জনকে হত্যা করলেন। এই হত্যার দায় তাকে নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী রবিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
হাসিনা বলেন, হরতাল দিয়ে ৪ নভেম্বর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ২১ লাখ পরীক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধ করলেন। শিশুদের মন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে কেউ যাতে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় আসতে না পারে সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। আগামী নির্বাচন সময়মতো অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে আবারো নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, পাড়ায় পাড়ায় সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলতে হবে। হরতালে যাতে জনগণের জানমালের ক্ষতি না হয় সেজন্য আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জনগণের কাছে কথা দিয়েছিলাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবো। বিচার শুরু হয়েছে। আজও দুজনের রায় হয়েছে। তাদের রক্ষা করার জন্য বেগম জিয়া হরতাল দিয়ে মানুষ হত্যা করছেন। তিনি এইখানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দাঁড়িয়ে বলেছেন ক্ষমতায় আসলে যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিবেন। তাদের কাজই হচ্ছে খুনীদের রক্ষা করা, মদদ দেওয়া।
আমরা ক্ষমতায় আসার ৫২ দিনের মাথায় পিলখানা বিদ্রোহ হয়। এতে ৫৭ জন সামরিক কর্মকর্তাসহ মোট ৭৩ জনকে হত্যা করা হয়। তাদের মধ্যে ৩৩ জনই আওয়ামী লীগ পরিবারের। দোষ দিয়েছিলেন আমাদের, আজকে সিএনএন’র রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে এর পেছনেও রয়েছে বিএনপি। পিলখানা হত্যার এক ঘণ্টা আগে উনি আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান। আজ পরিষ্কার হয়েছে তার আন্ডারগ্রাউন্ডে যাওয়ার কারণ। এই হত্যাকাণ্ডে তার মন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা জড়িত।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর জামায়াত। আর তার সঙ্গে জুটেছে হেফাজত। আওয়ামী লীগকে হুমকি দিয়ে বেগম জিয়া বলেছেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমাকে দেশ ছাড়তে হবে। আমি তো আছি।
ফোনালাপ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ৬০ ঘণ্টার আগেই আমি টেলিফোন করেছিলাম। কিন্তু উনি টেলিফোন ধরলেন না। বলা হল-রাত ৯টার পর উনি কথা বলবেন। যার একটা ফোন ধরতে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে তিনি দেশ চালাবেন কি করে?
প্রধানমন্ত্রী তার ৩৩ মিনিটের বক্তৃতায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদার জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনি কোন কোন মন্ত্রণালয় চান বলুন। আপনি তো আলোচনায় আসতে চান না। তাই হরতাল দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের উন্নয়নে ইর্ষান্বিত হয়ে লাভ নেই। আগামী মাসে আমরা ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎসব করব। কারণ আমরা ক্ষমতায় থাকলে দেশ উন্নয়নের রোল মডেল হয়। অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে দুর্নীতির দেশ হিসেবে পরিচিত হয়।’
শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের প্রতি কটাক্ষ করে বলেন, ‘হরতাল দিয়ে ২১ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। নিজে তো মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে অঙ্ক এবং উর্দু ছাড়া আর কোনো সাবজেক্টে পাশ করতে পারেননি।’
খালেদা জিয়ার সন্তানদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘সরকারের কোষাগার থেকে মাসে পনের শত করে টাকা নিয়েছেন। তাদেরকে কী শিখিয়েছেন? মানিলন্ডারিং, চাঁদাবাজি, লুণ্ঠন?’
এর আগে সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, যদি বিরোধী দল ৩ দিনের হরতাল প্রত্যাহার না করে তবে কোনো সংলাপে বসবে না আওয়ামী লীগ। ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বেগম জিয়ার শনিবার রাতের বৈঠকের পর দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে যে সংলাপের কথা ছিল তাতে শর্ত জুড়ে দেন সৈয়দ আশরাফ।
প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতার মধ্যে টেলিফোন সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফোনালাপের যতটুকু আপনারা শুনেছেন, আরো আছে। প্রধানমন্ত্রী ধৈর্য নিয়ে বিরোধী নেত্রীর কথা শুনেছেন। সব বক্তব্য প্রচার করা হলে আপনারা বুঝতেন তিনি কী ভাষায় কথা বলেছেন।
সমাবেশে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, বেগম জিয়া সাতবার জন্মগ্রহণ করলেও ঢাকা শহরে হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়ন বা ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে পারবেন না। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু বেগম জিয়া তা চান না। শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ আমাদের জন্যে জয় আনতে পারবে না। কৃষিমন্ত্রী বিরোধী জোটের ডাকা ৬০ ঘণ্টার হরতাল প্রত্যাখান করার আহ্বান জানান।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, বেগম জিয়া আপনি আলোচনা চান, নাকি হরতাল করতে চান? নির্বাচন হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী হবে। আলোচনা করতে চাইলে আসুন। আর হরতাল চাইলে দেখা হবে রাজপথে।
আওয়ামী লীগের উপদষ্টোমণ্ডলীর সদস্য আমীর হোসেন আমু বিরোধী দলের নেতার দিকে অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশকে আবারো পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বেগম জিয়া। এসময় তিনি বিরোধী দলের নেতাকে হরতাল বন্ধ করে আলোচনায় আসার কথা বলেন।
এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তৃতার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশ শুরু হয়। । সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
সমাবেশকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সকাল থেকেই উৎসবমুখর হয়ে উঠতে থাকে। উদ্যানের চারপাশে মাইকে মাইকে বাজতে থাকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ।
সকাল ১২টার পর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলকে কেন্দ্র করে জড়ো হতে থাকেন। দলীয় প্রতীক নৌকা, যুদ্ধারাধীদের বিচার ও সংসদ নির্বাচনের সমর্থন চেয়ে ব্যানার, ফেস্টুন, মাথায় ব্যান্ড পরে নেতাকর্মীদের সমাবেশে আসতে দেখা গেছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে সমাবেশে প্রবেশের মূল গেইট দুপুর ২টার আগে খোলা হয়নি।
সমাবেশে আসা কর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা লক্ষ করা গেছে। আড়াইশোর অধিক মাইক লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া শাহবাগ থেকে টিএসসি, দোয়েল চত্বর, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, মৎস্য ভবন থেকে শিশুপার্ক পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে এসব মাইক লাগানো হয়।
দিরিপোর্ট২৪/আমান/রানা/বাহরাম/মৌমিতা/এসবি/এইচএসএম/নভেম্বর ০৩, ২০১৩)