শামীম রিজভী, দ্য রিপোর্ট : যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নেওয়া গণজাগরণ মঞ্চের বর্ষপূর্তি হচ্ছে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি। বছরপূর্তি উপলক্ষে ৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘গণজাগরণ দিবস’ হিসেবে পালন করবে মঞ্চের কর্মীরা।

২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ’৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন শাস্তির রায়ের পর সাধারণ মানুষ ও তরুণরা ব্যানার হাতে শাহবাগ চত্বরে নিজেদের ক্ষোভ আর বেদনাকে প্রকাশ করার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিল। সেই মিছিলে এসে যোগ দিয়েছিলেন লাখো জনতা। এসেছিলেন বৃদ্ধ, তরুণ, শিশু-কিশোর, শহীদ পরিবারের উত্তরাধিকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সর্বহারা শ্রমজীবী মানুষ থেকে কর্পোরেট অফিসের বড় বড় কর্মকর্তারাও।

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় তিন দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। ৫ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ আয়োজনে শিশু-কিশোরদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ৫ ফেব্রুয়ারি শপথ গ্রহণ ও জাগরণ যাত্রা দেশ-বিদেশের সবগুলো গণজাগরণ মঞ্চ থেকে একযোগে পালন করা হবে। ঢাকার বাইরের অন্যান্য মঞ্চগুলো নিজেদের মতো করে তাদের অনুষ্ঠানমালা নির্ধারণ ও পালন করবে।’

ডা. ইমরান বলেন, বছর ঘুরে আবারও আমাদের সামনে এসে হাজির হচ্ছে সেই ৫ ফেব্রুয়ারি। বর্ষপূর্তির ক্ষণে নিজেদের আবারও উদ্দীপ্ত করার প্রত্যয় ও অর্জনগুলোকে মূল্যায়ন করা খুব প্রয়োজন। বাংলাদেশের সকল মানুষের এই বিস্ময়কর ঐক্যবদ্ধ জাগরণকে স্মরণীয় করে রাখতে আমরা ৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘গণজাগরণ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছি।

গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তা মারুফ রসূল দ্য রিপোর্টকে বলেন, আমাদের এই দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল হিসেবে কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় ঘোষণা এসেছে। ইতোমধ্যে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরও হয়েছে। তবে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের সময় অনেক বাধা-বিপত্তি এসেছে। কুচক্রী মহল এ রায় কার্যকর স্থগিত করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের আন্দোলন সব ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ প্রমাণিত করেছে। এই আন্দোলনকে সফল করার জন্য আমরা আমাদের কয়েকজন ভাইকে হারিয়েছি। আমরা তাদের অবদান ভুলব না। তাদের এই আত্মত্যাগ বৃথা হতেও দেব না।

গণমাধ্যমের অবদানের কথা স্মরণ করে মারুফ বলেন, শুধু পেশাগত দায়িত্ব পালন নয়, এ দেশের গণমাধ্যমগুলো ফেব্রুয়ারির গণআন্দোলনকে হৃদয়ে ধারণ করেছে। বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও এক বছর সহযোদ্ধার মতো তারা আমাদের পাশে ছিলেন। আশা করি, সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা একত্রে কাজ করলে একাত্তরের চেতনায় দেশকে পরিচালিত করতে পারব।

অনুষ্ঠানের বিস্তারিত সম্পর্কে জানতে চাইলে গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ও অন্যতম উদ্যোক্তা শিবলী হাসান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ দিবসে সকাল ৭টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে ও ৯টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন। বিকেল ৩টায় শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু। আগামীর সংগ্রামে নিজেদের নিয়োজিত রাখার নিমিত্তে সাড়ে ৩টায় দেশ-বিদেশের সকল গণজাগরণ মঞ্চে একযোগে শপথ গ্রহণ। এর পরেই প্রদর্শনী উদ্ধোধন। ৪টায় দেশ-বিদেশের সকল গণজাগরণ মঞ্চে একযোগে জাগরণ যাত্রা। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত উম্মুক্ত স্মৃতিচারণ এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।

শিবলী আরও বলেন, ৬ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে দেশবরেণ্য সংগঠনসমূহের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এর পর রাত ৮টা পর্যন্ত গণমাধ্যম কর্মীদের স্মৃতিচারণ ও রাত ১০টা পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের পঙতিমালা। শেষ দিন ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রজন্ম চত্বরে ৩টি ভাগে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। ১ম গ্রুপে ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত অংশগ্রহণ করতে পারবে। তাদের জন্য বিষয় ‘রং তুলিতে বাংলাদেশ’। দ্বিতীয় গ্রুপে ৪র্থ থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে। তাদের জন্য বিষয় ‘রং তুলিতে মুক্তিযুদ্ধ’ এবং তৃতীয় গ্রুপে ৭ম থেকে ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে। তাদের জন্য বিষয় ‘রং তুলিতে শাহবাগ’। এ ছাড়াও বিকাল ৩টায় জাগরণ সমাবেশ, সমাবেশের পর সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

শিবলী হাসান আরও বলেন, শাহবাগ আন্দোলন ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নিয়ে সর্বোচ্চ ১৫০০ শব্দের মধ্যে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো বয়সী শিক্ষার্থী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শাহবাগ সমন্বয় সেলে অথবা গণজাগরণের ইমেইল ঠিকানায় লেখা জমা দেওয়া যাবে। নির্বাচিত ৫২টি লেখা নিয়ে বইমেলায় একটি সংকলন প্রকাশিত হবে। বর্ষপূর্তির এই আয়োজন সমন্বয়ের জন্য শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে আমাদের সেলটি প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এ ছাড়াও গণজাগরণ মঞ্চের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও ফোনে এ সংক্রান্ত যোগাযোগ করা যাবে।

(দ্য রিপোর্ট/এসআর/জেএম/সা/ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৪)