প্রথম দিনেই উপচেপড়া ভিড়!
মুহম্মদ আকবর, দ্য রিপোর্ট : বইমেলার প্রবেশদ্বার খুলতে তখনও দেরি ২ ঘণ্টা। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আগত হাজারো বইপ্রেমী ভিড় করছে মূল ফটকের বাইরে। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে উদ্বোধনী পর্ব শেষ হতেই ঠেলে প্রবেশ করতে থাকে দর্শনার্থীরা। এবারের মেলা কিছুটা ভিন্ন। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙ্গে একুশের আবহযুক্ত এই মেলাকে এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের সঙ্গে সম্প্রসারণ করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। যেখানে শুধুই প্রকাশকরা বসেছেন নতুন বইয়ের পসরা সাজিয়ে। নানা রং আর বর্ণের স্টলের সঙ্গে নতুন বইয়ের গন্ধ মাঘের শেষ বিকেলকে যেন অন্যরকম করে তোলে। সোহরাওয়ার্দীতে প্রকাশকরা বসেছেন বলে একাডেমি প্রাঙ্গণ ম্রিয়মাণ- তা কিন্তু নয়! সেখানেও রয়েছে শিশু-কিশোরদের বই নিয়ে শিশুকর্নার আর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা প্রকাশনা। আর ঐতিহাসিক বর্ধমান হাউসের পাশের বহেড়া তলায় লিটলম্যাগের বড় আড্ডা। তবে বরাবরের মতই মেলার প্রথম দিনে কবি খন্দকার আশরাফ চত্বরে লিটলম্যাগের স্টলে তেমন জনসমাগম লক্ষ্য করা যায়নি।
অমর একুশের চেতনাঋদ্ধ এই মেলা। আর সে জন্যই আগত দর্শনার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় উত্তাল সেই দিনের কথা। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের সচিত্র ব্যানার, ভাষার মর্যাদা রক্ষায় শহীদদের আত্মত্যাগের স্মৃতি স্মরণ করে কবি-সাহিত্যিকদের নানা উক্তি সংবলিত ব্যানার, ভাষা শহীদদের প্রতিকৃতিসহ অঙ্গসজ্জায় নানাভাবে ফুটে ওঠে সেই দিনগুলোর কথা।বাঙালির প্রাণের এই মেলার শুরু হয়ে গেলেও বেশ কিছু প্রকাশনী এখনও শেষ করতে পারেনি স্টল সাজানোর কাজ। পাশাপাশি মেলার অনেক জায়গাতেই ছড়িয়ে ছিল কাঠ, বাঁশ, দড়ি-দড়া, শোলা, হার্ডবোর্ড। প্রধানমন্ত্রী আসার কারণে মেলার প্রথমদিন ধুলা নিয়ন্ত্রণে প্রচুর পানি ছিটানো হয়েছে। তারপরও দর্শনার্থীর সংখ্যা এত বেশি ছিল যে, মেলার কোথাও কোথাও উড়তে দেখা গেছে ধুলাবালি। আবার কোথাও কোথাও ছিল কাদা-জলের মাখামাখি। তবে এ সব কিছুই বইয়ের প্রতি ভালোবাসার কাছে হার মেনেছে।
প্রথম দিনে মেলার নতুন বই : মেলার প্রথম দিনে তথ্যকেন্দ্র উন্মুক্ত না হওয়ায় একাডেমির সমন্বয় ও জনসংযোগ উপ-বিভাগ থেকে প্রকাশিত নতুন বইয়ের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন স্টল ঘুরে জানা গেছে, নতুন শতাধিক বই প্রকাশ পেয়েছে। প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে আগামী প্রকাশনী থেকে এসেছে তসলিমা নাসরিনের ‘নিষিদ্ধ’, শাহাদুজ্জামানের ‘শাহবাগ ২০১৩’, হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘জয়নাব’। আদর্শ এনেছে যোগেন চৌধুরীর ‘মায়া বৃত্ত’। ইত্যাদি এনেছে হাসান আজিজুল হকের ‘সক্রেটিস’, অনিন্দ্য প্রকাশ এনেছে আহমদ রফিকের ‘দেশ বিভাগ ফিরে দেখা’, ভূমিকা এনেছে সেলিনা হোসেনেরর ‘টানাপোড়েন’। অন্যদিকে অন্যপ্রকাশ থেকে হুমায়ূন আহমেদের ‘কাকারু, ‘টগর অ্যান্ড জেরি’, ‘ব্যাং কন্যা এ্যালেং’, ‘কানী ডাইনি’, ‘বোকা রাজার সোনার সিংহাসন’ বেরিয়েছে।গ্রন্থমেলার দ্বিতীয় দিনের আয়োজন : ২ ফেব্রুয়ারি রবিবার মেলার মূল মঞ্চে থাকছে ‘জন্মশতবার্ষিকীর আলোছায়ায় জয়নুল আবেদিন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শিল্প-সমালোচক আবুল হাসনাত। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন আবুল মনসুর, সৈয়দ আজিজুল হক, সাজ্জাদ শরিফ ও ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান। সভাপতিত্ব করবেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। সন্ধ্যায় পরিবেশিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
(দ্য রিপোর্ট/এমএ/এইচএসএম/সা/ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৪)