তালাককে ইসলাম বৈধ এবং সহজ করলেও নবী করিম (সাঃ) এটাকে জঘন্যতম জায়েজ কাজ মনে করতেন। সে কারণে মুসলিম নর-নারীরা যাতে তালাক বা বিবাহ-বিচ্ছেদ না ঘটায় তার জন্য তিনি নানাভাবে উপদেশ দিয়ে গেছেন। এমন অনেক ধর্ম রয়েছে যেখানে তালাক বা বিবাহ-বিচ্ছেদের সুযোগ নেই। কিন্তু সমাজ বাস্তবতার নিরিখে রাষ্ট্র আজ তালাক বা বিবাহ-বিচ্ছেদকে আইনগত স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হচ্ছে এবং এ থেকে সৃষ্ট বিপত্তি যাতে কমিয়ে রাখা যায় তার জন্য নানান আইন এবং শর্ত আরোপ করা হচ্ছে।

আধুনিক সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে ব্যক্তি স্বাধীনতার উন্মেষ ঘটায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে সাবালক-সাবালিকা নারী-পুরুষ অনেকটাই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। পাশাপাশি বিবাহ-বিচ্ছেদের ক্ষেত্রেও তারা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এর ফলে আইন মূখ্য হয়ে দেখা দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জন্ম নেয়া সন্তান-সন্তুতিরা বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর আইনগত সহায়তা পেলেও সামাজিক এবং পারিবারিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

দ্য রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডট কম শনিবার সংখ্যায় ভেঙে যাওয়া পরিবারের সন্তানদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যাতে দেখা যায়, এই সব পরিবারের সন্তানরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে বিকারগ্রস্ত হচ্ছে অথবা নানা অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে। আমরা মনে করি, আধুনিক সভ্যতায় বিকশিত পাশ্চাত্যে পরিবার প্রথা যেভাবে ভেঙে পড়ছে আমাদের সমাজেও তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। সমাজ আরও বিকশিত হলে তা আরও ব্যাপকতা পাবে বলে আমরা মনে করি। সে কারণে এই সব পরিবারের সন্তান-সন্তুতিরা যাতে সমাজ-বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবন থেকে হারিয়ে না যায় তার জন্য এখন থেকেই আমাদের সচেতন হওয়া দরকার। দরকার এ সমস্ত শিশুদের মানসিক বিকাশ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক নিরাপত্তা দান।

এ কথা না বললেই নয় যে, দাম্পত্য জীবনের নিষ্পেষণের শিকার নর-নারীদের বিবাহ-বিচ্ছেদ বা তালাক বন্ধ করার জন্য উদ্যোগ নিলে সেটাও ব্যক্তি স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি বাড়তে পারে। এমনকি তা ব্যক্তি মানুষকে সারা জীবনের জন্য মানসিক পঙ্গুত্ববরণে বাধ্য করতে পারে। সে কারণে আইন বা সামাজিক চাপ দিয়ে বিবাহকে টিকিয়ে রাখার কোনো চেষ্টা আধুনিক সমাজে গ্রহণযোগ্য হবে না।

এই উভয় সঙ্কটের দিকে আমাদের সমাজ দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে। ধর্ম বা সামাজিক রীতির দোহাই দিয়ে সাময়িকভাবে এটাকে ঠেকিয়ে রাখা গেলেও সঙ্কট একদিন মহিরুহ হয়ে দেখা দিতে বাধ্য। সে কারণে সমাজের পুরনো ধ্যান-ধারণার জায়গায় নতুন ধ্যান-ধারণা আমাদের তৈরি করতেই হবে। রাষ্ট্র এবং সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে নব প্রজন্মের সঙ্কট সমাধানের জন্য। মা-বাবার স্নেহ-মমতার বাইরেও যে মানব সন্তান বড় হয়ে উঠতে পারে তার গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থাও করতে হবে। তাহলে পাশ্চাত্যের শিশুদের মতো আমাদের শিশুরাও স্বাবলম্বী হয়ে সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে।