সীমান্ত খোকন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী উপজেলা কসবায় পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছে। অবাধে পাহাড় কাটার ফলে কসবা উপজেলার পাহাড়গুলোর অস্তিত্ব এখন বিলীন হওয়ার পথে। নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য।

উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের খাদলা, মাদলা, কোল্লাপাথর, নোয়াপাড়া, ধোপাখলা, সাগরতলা, বেলতলি, কৈখলা, পুটিয়া ও শ্যামপুর; গোপীনাথপুর ইউনিয়নের সুতারমুড়া, রামপুর, কাজীয়াতলা, পাথারিয়াদ্বার, মধুপুর, ফতেহপুর, কুইয়াপানিয়া ও লক্ষীপুর এবং কসবা পৌর এলাকার আকাবপুরসহ উল্লেখিত গ্রামগুলোতে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকার কিছু পাহাড় খেকো ব্যক্তিস্বার্থে সরকারি খাস ভূমি পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছেন। একটি সংঘবদ্ধচক্র পাহাড় কাটা ও মাটি বিক্রির সঙ্গে জড়িত। তারা প্রশাসনের ছত্রছায়ায় প্রকৃতির খুঁটি পাহাড় ধ্বংস করছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে ভূমি অফিসের কিছু অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

স্থানীয় তহশীল অফিসের তহশীলদাররা প্রতি মাসে মাসোহারা পেয়ে থাকেন ভূমি খেকোদের কাছ থেকে।

চন্ডিদ্বার ও বায়েক ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার মো. আবুল কাশেম। যার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনি পাহাড় খেকোদের সহায়তা করছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের নোয়াপাড়া, ধোপাখলা, সাগরতলা, বেলতলী, মাদলা ও কোলাপাথরের পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে খুশিমতো। কোলাপাথর শহীদ সমাধিস্থল ঘিরে সরকারের রয়েছে পর্যটন কমপ্লেক্স তৈরির পরিকল্পনা।

এদিকে পার্শ্ববর্তী পাহাড়গুলো কেটে সৌন্দর্যহানিসহ গোটা এলাকার সৌন্দর্য নষ্ট করা হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। পাহাড় কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কসবায় তা মানা হচ্ছে না।

কোলাপাথর গ্রামের আক্তার মিয়া ও মাদলা গ্রামের হালিম মিয়ার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে অবৈধভাবে পাহাড় কাটার দায়ে আক্তার মিয়া চার মাস জেল খেটে জামিনে এসে পুনরায় পাহাড় কাটা শুরু করেছেন। প্রতিদিন শত শত ট্রাক নিয়ে পাহাড় কেটে তারা মাটি বিক্রি করছেন। ভরাট করছেন নিচু জমি, পুকুর, জলাশয়, খাল ও গর্ত।

স্থানীয় উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম লিখিতভাবে একটি প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দাখিল করেছেন, অবৈধভাবে যারা পাহাড় কাটছে তাদের বিরুদ্ধে।

অপরদিকে উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের লতুয়ামুড়া, খিরনাল, চানমুড়া, লক্ষ্মীপুর ও কসবা পৌর এলাকার আকবপুর গ্রামেও চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। অথচ এ সব এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অনেক গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতি। ঐতিহাসিক স্থানগুলো নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার অশুভ পাঁয়তারা বন্ধে স্থানীয় ও উপজেলা প্রশাসন আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে এমনটি প্রত্যাশা স্থানীয়দের।

এ ব্যাপারে বায়েক ইউপি চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল হোসেন জানান, পাহাড় কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জালাল সাইফুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, বায়েক ইউনিয়নের কোলাপাথর ও মাদলা গ্রামের দুজনের বিরুদ্ধে কসবা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, আইন প্রয়োগ করে পাহাড় কাটা বন্ধ করা সম্ভব নয়। তিনি এ বিষয়ে সমাজের সচেতন ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

(দ্য রিপোর্ট/এসকে/এমএআর/এএল/ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৪)