রাবি সংবাদদাতা : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিভিন্ন খাতে বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর কয়েক দফা হামলা চালিয়েছে পুলিশ ও ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের চালানো গুলিতে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রসহ রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ভবনে ভাংচুর চালিয়েছে। শিক্ষার্থীরা এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের পদত্যাগ দাবি করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিলের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে রবিবার সকাল ৮টা থেকে কর্মসূচি পালন করছিল তারা। সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রসাশন ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেয়। এ সময় সহকারী প্রক্টর সিরাজুল ইসলাম, হেলাল উদ্দিন ও জুলফিকার আলীর নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী তাদের উঠে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। একই সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি মিছিল এসে আন্দোলনকারীদের পূর্ব পাশে অবস্থান নেয়। এক সময় তারা বিনা উস্কানিতেই ছাত্রলীগ কর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ককটেল ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একই সময় পশ্চিম দিক থেকে পুলিশও শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ায়শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে। তারা পুরাতন ফোকলোর মাঠে অবস্থান নিলে ছাত্রলীগ সেখানেও হামলা চালায়। এ সময় কমপক্ষে ৭৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর পরই ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকরা আরএমপি পূর্ব জোনের উপ-কমিশনার প্রলয় চিসিমের কাছে পুলিশি হামলার কারণ জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এ সময় চিসিমসহ সহকারী প্রক্টর সিরাজুল ইসলাম, হেলাল উদ্দিন ও জুলফিকার আলীর নির্দেশে পুলিশ সাংবাদিকদের ওপর রাবার বুলেট ছুড়ে এবং লাঠিচার্জ করে। এতে কমপক্ষে ১০ সাংবাদিক আহত হয়। আহতরা হলেন, মাছরাঙ্গা টিভির গোলাম রাব্বানী, বিডি নিউজের নাদিম মাহমুদ, শীর্ষ নিউজের জাকির হোসেন তমাল, নিউজ এইজের নাজিম মৃধা, দৈনিক মানবকণ্ঠের বুলবুল আহমেদ ফাহিম, জহুরুল ইসলাম মুন, মেহেদী প্রমুখ।

এ ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকরা তৎক্ষণিক কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা রবিবার বিকেল ৫টার মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিন সহকারী প্রক্টরকে প্রত্যাহার ও উপ-কমিশনার প্রলয় চিসিমের অপসারণ দাবি করেছে। রাবি উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক নেতারা এই দাবি জানান।

এরপর দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় পুলিশ তাদের ওপর আবারও টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে। পরে শিক্ষর্থীরা জুরেরী মাঠে জড়ো হলে সেখানেও পুলিশ তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় অন্তত অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দুটি মাইক্রোবাস, ভিসির বাসভবন ও কয়েকটি একাডেমিক ভবনে ভাংচুর চালায়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে বিক্ষোভ করছে।

এ বিষয়ে পুলিশের উপ-কমিশনার প্রলয় চিসিম বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশেই গুলি চালিয়েছি।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা সাদেকুল আরেফিন মাতিন বলেন, ‘ঘটনার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সময় মত জানানো হবে।’

(দ্য রিপোর্ট/এমএএ/এসকে/সা/ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৪)