কাজী জামশেদ নাজিম, দ্য রিপোর্ট : অমর একুশে গ্রন্থমেলায় পকেটমার, বইচোরসহ বিভিন্ন বিষয়ে নজরদারি করার জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। মেলার ভেতরে ও বাইরে থাকছে ডিবির নারী সদস্যদের নিয়ে গঠিত বিশেষ দল। অঘোষিতভাবে ডিবি সদস্যরা এই দলটিকে ‘লাইলী পার্টি’ বলে।

বইমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। যে কোনো ধরনের নাশকতা রোধে ডিএমপি ও র‌্যাব পৃথক নিরাপত্তা পরিকল্পনা ছক তৈরি করেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, রাজধানীর বিশেষ কয়েকটি অনুষ্ঠানে পকেটমার ও ছিনতাইকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে জনজমায়েত বেশি হলে অপরাধীরা দলবদ্ধভাবে পকেট মারার চেষ্টা চালায়। এ সব প্রতিরোধে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের নারী সদস্যদের একটি দল নজরদারির কাজ করে।

তিনি বলেন, একুশে বইমেলার চারপাশে পুলিশ সদস্য ছাড়াও সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। একই সঙ্গে একজন সহকারী পুলিশ কমিশনারের (এসি) নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নারী সদস্য মেলায় দায়িত্ব পালন করবেন। নারী সদস্যরা আধুনিক পোশাক পরে বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকবেন। তাদের দেখলে মনে হবে তারাও মেলার দর্শনার্থী। মূলত তারা অপরাধীদের নজরদারি করবেন।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাজনৈতিক সহিংসতা চলেছে দীর্ঘদিন ধরে। এই অবস্থা শেষ হতে না হতেই শুরু হয়েছে বইমেলা। মেলাকে কেন্দ্র করে নাশকতাকারীরা তৎপর হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়েছে র‌্যাব ও পুলিশ।

র‌্যাবের মিডিয়া অ্যান্ড লিগ্যাল উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বইমেলার জন্য পুলিশের পাশপাশি র‌্যাব সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। মেলার বাইরে ও ভেতরে বিশেষ কয়েকটি স্থানে র‌্যাব সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়াও আশপাশের এলাকায় র‌্যাব সদস্যরা টহল দেবে।’

রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মারুফ হাসান সরদার বলেন, ‘অমর একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে ডিএমপি। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে অন্য বছরে তুলনায় এবার নিরাপত্তার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ডিএমপির পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিওএম) কাছে অতিরিক্ত পুলিশ চাওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, সার্বিক নিরাপত্তার লক্ষে মেলার অভ্যন্তরে, মূল গেট ও গেটের বাইরে ব্যাপক নিরাপত্তা ছক তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া মেলার নিরাপত্তার দায়িত্বে পুরুষ সদস্যের বাইরে নারী পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দলবদ্ধভাবে মেয়েরা আসেন। তাদের নজরে রাখার জন্য অধিক সংখ্যক নারী সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

ডিএমপি সূত্র জানায়, মেলার সব প্রবেশ এবং বের হওয়ার পথে নিরাপত্তায় উপ-পরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে পুরুষ ও নারী পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ পাশের গেটে ৩ জন করে এসআই দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে একজন নারী এসআই থাকবেন। দুটি গেটেই ১০ জন নারীসহ ১৮ জন করে পুলিশ থাকবে। বাংলা একাডেমির মূল গেট, ব্যাংক গেট এবং মেলা গেটে ৬ জন নারী পুলিশসহ থাকবে ৯ জন করে পুলিশ।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমির অভ্যন্তরে মঞ্চ ঘিরেও নেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা। মূল মঞ্চ ও বটমূলের দুটি মঞ্চের নিরাপত্তায় আলাদাভাবে একজন নারী এসআইসহ ৩ জন এসআই দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া ৫ জন নারী সদস্যসহ ৯ জন পুরুষ সদস্যও মোতায়েন করা হবে। মেলার আশপাশে হকার বসছে কিনা- তা আলাদাভাবে নজরদাড়ি করবে ডিএমপি।

(দ্য রিপোর্ট/কেজেএন/এইচএসএম/এনআই/শাহ/ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৪)