একদিকে উপজেলা নির্বাচন অন্যদিকে প্রকল্প পাসের হিড়িক
এখন বইছে উপজেলা নির্বাচনের হাওয়া। ঠিক এই সময়ে মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প পাসের হিড়িক পড়েছে। সরকারের এ সব উন্নয়ন কার্যক্রম উপজেলা নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
তারা বলছেন, নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে নির্বাচনের আগে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হলে সরকারদলীয় প্রার্থীরা বিশেষ সুযোগ পেতে পারেন।
নির্বাচন কমিশন বলছে, উপজেলা নির্বাচনের কারণে তো জাতীয় উন্নয়ন বন্ধ থাকতে পারে না।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনের সঙ্গে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্প পাসের কোনো সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের কারণে বেশ কিছুদিন একনেক স্থগিত থাকায় যে সব প্রকল্প জমে ছিল সেগুলো ধারাবাহিকভাবে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা বলে রাজনৈতিক প্রকল্প, তারা বাজে কথা বলেন। কেননা, কোনটি রাজনৈতিক আর কোনটি রাজনৈতিক নয় সেটি খুঁজে বের করা কঠিন।
সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত দুটি একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মোট ২৬টি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। তার মধ্যে সড়ক, সেতু, কালভার্ট ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে।
১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয় ১৩টি উন্নয়ন প্রকল্প। এর মধ্যে ৬টি প্রকল্পই হচ্ছে সড়ক, সেতুসহ গ্রামীণ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হল- মধুমতি নদীর উপর কালনা সেতু নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৫ কোটি টাকা। কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-মিঠামইন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯ কোটি টাকা। পত্নীতলা-সাপাহার-রহনপুর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ব্যয় ১২৮ কোটি টাকা। কানসাট-রহনপুর-ভোলাহাট সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ব্যয় ৩৩ কোটি টাকা। শহীদ মনসুর আলী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ব্যয় ৫৩ কোটি টাকা। বিরুলিয়া-আশুলিয়া সড়ক নির্মাণ, ব্যয় ৫০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ২৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় একনেক বৈঠক। এতে অনুমোদন দেওয়া হয় মোট ১৩টি উন্নয়ন প্রকল্প। তার মধ্যে সড়ক ও সেতুসহ গ্রামীণ অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট প্রকল্প হল ৪টি।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হল- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কনস্ট্রাকশন অব স্মল ব্রিজ/কালভার্টস (আপ টু ১২ মিটার লং) অ্যাট চিটাগাং হিলট্রাকস রিজিওন (সেকেন্ড ফেজ) প্রকল্প, ব্যয় ১৩২ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার বিভাগের বৃহত্তর ময়মনসিংহ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ব্যয় ৪৪৪ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার বিভাগের জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ৪টি ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প, ব্যয় ১৫১ কোটি টাকা। সড়ক বিভাগের মির্জাপুর (গড়াই) সখিপুর সড়ক উন্নয়ন (সংশোধিত) প্রকল্প, ব্যয় ৩৫ কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার দ্য রিপোর্টকে বলেন, দলীয় প্রার্থীদের সুবিধা দিতে নির্বাচনের আগে এ সব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ এ সব উন্নয়ন প্রকল্প ভোটারদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এতে সরকারদলীয় প্রার্থীরা বিশেষ সুযোগ পেতে পারেন- এমন ধারণা করা যেতেই পারে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ সাদিক বলেন, উপজেলা নির্বাচনের কারণে তো আর জাতীয় উন্নয়ন বন্ধ থাকতে পারে না। যদি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালায় বিধি নিষেধ আছে এ রকম কোনো প্রকল্প অনুমোদন হয় তাহলে আমরা অবশ্যই বিষয়টি দেখব।
উল্লেখ্য, ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে প্রথম পর্বের উপজেলা নির্বাচন। এরপর দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে।
(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এসবি/এইচএসএম/সা/ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৪)