হাসিব বিন শহিদ, দ্য রিপোর্ট : বাগেরহাট-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেনের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা পড়েছে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে রবিবার এমপি মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনিদিষ্ট অভিযোগ আসে। কমিশনের চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান অভিযোগটি পরীক্ষার জন্য বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্তের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এমএইচ সালাহউদ্দিনকে নির্দেশ দিয়েছেন।

কমিশন সূত্র দ্য রিপোর্টকে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এমপি মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে বলা হয়েছে, মোজাম্মেল হোসেন ২০০৬ সাল থেকে ২০০১১ সাল পর্যন্ত সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তার স্ত্রীর নামে এক কোটি টাকার সঞ্চয়ী হিসাব গোপন রেখে ২০১৩ সালে তথ্য বিবরণী পেশ করেন। গত ২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় তথ্য বিবরণীতেও অনেক সম্পদ গোপন রেখেছেন তিনি। বর্তমানে তার সম্পদ প্রায় ১০০ গুন বেড়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দেওয়া তথ্য বিবরণীতে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পদের হিসাব গোপন করেছেন। ইতোপূর্বের তথ্য বিবরণীতে বাগেরহাটস্থ আমলাপাড়ায় স্ত্রীর নামে একটি বাড়ির কথা উল্লেখ করেছেন। গত ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাগেরহাট আমলাপাড়ায় বিশাল অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ করেছেন তিনি। যার নির্মাণ ব্যয় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা (বাড়ি নম্বর ৪২, আমলাপাড়া মেইনরোড, বাগেরহাট)। খুলনায় নিরালায় একটি অত্যাধুনিক মডেলের বাড়ি নির্মাণ করেছেন। যার নির্মাণ মূল্য ১০ কোটি টাকা (বাড়ি নম্বর-৪৭৭, রোড নম্বর-২৪, সঞ্চিতা, নিরালা আ/এ, খুলনা)। একই সময় ঢাকার নিকুঞ্জে বহুতল ভবনের নির্মাণে তিনি ২০ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন।

জানা যায়, এমপি মোজাম্মেল হোসেন ডাক্তারি পেশায় নিযুক্ত থাকলেও তিনি গত ২০ বছর ওই পেশায় যুক্ত নন। এ পেশার মাধ্যমে তার কোনো আয়ও নেই।

অভিযোগে আরও বলা হয়, গত পাঁচ বছর এমপি থাকা অবস্থায় মোরেলগঞ্জ শরণখোলায় সব সরকারি চাকরি প্রদানে প্রভাব বিস্তার করে প্রায় ৫০০ লোকের চাকরি, পুলিশ, শিক্ষক, নার্স, স্কুল-কলেজের শিক্ষক নিয়োগ, সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পিয়ন, সুইপার নিয়োগে জন প্রতি তিন থেকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। সর্বশেষ মোরেলগঞ্জস্থ দৈবজ্ঞহাটি কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগে ১০ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন।

নিয়ম অনুসারে, একজন এমপি তিনটির বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতি থাকতে পারবেন না। তবুও তিনি নিয়ম ভঙ্গ করে প্রায় ১৫টি স্কুল-কলেজের সভাপতি থেকে নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন।

এ ছাড়া সরকারের টেস্ট রিলিফ কর্মসূচি, কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী ৪০ দিনের কর্মসূচির সমস্থ টাকা নামে, বেনামে ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে আত্মসাত করেছেন। ৪০ দিনের ওই কর্মসূচি থেকে অর্ধেক অর্থ মোজাম্মেলকে দিতে পারে এমন প্রজেক্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে কারণে মূল পরিকল্পনা ব্যাহত হয়েছে। বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ শরণখোলার বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজের মূল টাকার ২০ থেকে ৪০ শতাংশ টাকা ঠিকাদারদের কাছ থেকে আগে নেন তিনি।

এ সব অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ মোজাম্মেলের ছেলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেনকে দিয়ে খুলনা, বাগেরহাট, ঢাকায় বিশাল অট্টালিকা তৈরি করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি অবৈধ সম্পদের তথ্য গোপনের অপচেষ্টা চালিয়েছেন। হলফনামায় মোজাম্মেলের গাড়ি না থাকলেও বাস্তবে তার একাধিক গাড়ি রয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এইচবিএস/এনডিএস/ এনআই/ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৪)