মেলার দ্বিতীয় দিনের সাংস্কৃতিক আয়োজন
মেলামঞ্চের বিষয় ভিত্তিক আলোচনা : বিকেল ৪টায় মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিকীর আলো-ছায়ায় জয়নুল আবেদিন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ পাঠ করেন শিল্প-সমালোচক আবুল হাসনাত। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আবুল মনসুর, সৈয়দ আজিজুল হক, সাজ্জাদ শরিফ ও ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান। সভাপতিত্ব করেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী।
প্রাবন্ধিক আবুল হাসনাত বলেন, ‘জয়নুল ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ চিত্রমালা অঙ্কনের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষে খ্যাতিমান শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ তার শিল্পীসত্তাকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। তিনি দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের বেঁচে থাকার আর্তিকে মোটা তুলিতে যেভাবে রূপায়িত করেছিলেন তার কোনো তুলনা নেই। এই চিত্রমালা একদিকে মানবিক বিপর্যয়ের আশ্চর্য দলিল হয়ে আছে, অন্যদিকে এই চিত্রমালা অঙ্কনের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা শিল্পী।’
জয়নুলের পারঙ্গমতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জয়নুল আবেদিনের বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের সৃষ্টিতে লোকশিল্পের আত্তীকরণ ও আধুনিক বোধের যে প্রকাশ আমরা পর্যবেক্ষণ করি তা শুধু মনোজ সুষমামণ্ডিত নয়, এদেশের চিত্রকলায় নব্যধারাও বটে। এ ধারার আধুনিকায়নের যে অভিব্যক্তি, আমরা মনে করি বাংলাদেশের চিত্রশিল্পের বিশিষ্টতা, চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যের শনাক্তকরণে শক্তিশালী প্রকাশও বটে। শতবার্ষিকীর আলোছায়ায় আচার্য জয়নুল আবেদিনকে বিচ্ছিন্নভাবে নয়, সামগ্রিকভাবে পর্যালোচনা প্রয়োজন। তার সৃষ্টি, তার ব্যক্তিত্ব, লোকশিল্প ও ঐতিহ্যভাবনা এবং দেশ আত্মার মর্মবেদনা ও সংকট উত্তরণের জন্য তার ভাবনাকে নিয়ে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে চর্চা হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি।’
আলোচকবৃন্দ বলেন, ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বাংলাদেশের শিল্পকলা-আন্দোলনে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার নিবিড় সংশ্লেষ ঘটিয়েছেন। জয়নুলের রেখা ও রঙে বাঙালির জাতিমানস প্রকাশিত। তার হাত ধরে আমাদের চিত্রশিল্প আজ অজস্র বৈচিত্র্য-অভিমুখী। জন্মশতবর্ষে তাকে স্মরণের পাশাপাশি তার সূত্র ধরে নতুন করে আমাদের চিত্রশিল্পের দার্শনিক-ঐতিহাসিক-নান্দনিক তদন্ত হওয়া জরুরি।’
সভাপতির বক্তব্যে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘জন্মশতবর্ষে জয়নুল আবেদিনের জীবন ও শিল্পকর্মের দিকে নতুন করে ফিরে তাকাতে হবে। কারণ জয়নুল আবেদিনের বিচিত্র শিল্প সৃষ্টির নানা ধারার মূল্যায়নই পারে উত্তর প্রজন্মের শিল্পীদের মাঝে তার অঙ্গীকারঋদ্ধ শিল্পী মানসের যোগাযোগ ঘটাতে।’
সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা : সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী দিল আফরোজ রেবা, দিলরুবা খান, চন্দনা মজুমদার, মীনা বড়ুয়া, আবু বকর সিদ্দিক, পাগলা বাবুল, মো. নূরুল ইসলাম, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, অনিমা মুক্তি গোমেজ, পল্লবী সরকার মালতী এবং এনামুল হক। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বেণু চক্রবর্তী (তবলা), হাসান আলী (বাঁশি), নির্মল কুমার দাস (দোতারা), নাজমুল আলম খান (মন্দিরা) এবং আবদুস সোবহান (ঢোল)।
সোমবারের অনুষ্ঠান : সোমবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আবদুস সবুর খান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, ফরীদ উদ্দীন মাসউদ, আমিনুর রহমান সুলতান, এ. এস. এম. বোরহান উদ্দীন। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।
(দ্য রিপোর্ট/এমএ/কেএম/এনআই/ফেব্রুয়ারি ০২,২০১৪)