পাবনা প্রতিনিধি : পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাবনার নারীরা খাসজমিতে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘদিন আন্দোলন করে পেয়েছেন সফলতা। সংসারে এনেছেন সচ্ছলতা। যাদের মধ্যে আছেন স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা নারীও।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামের ভূমিহীন নারী আভা রানী। ২২ বছর আগে মাছ ধরে চালানো তার স্বামীর টানাটানির সংসারে জুটতো না দু’মুঠো ভাত, পড়নে ছিল ছেঁড়া কাপড়। এরপর বিলকুড়ালিয়ার খাসজমি নিয়ে পুরুষের সাথে আন্দোলনে শামিল হন তিনি। এক টুকরো খাসজমি সরকার থেকে একসনা লিজ নিয়ে নিজেই চাষাবাদ করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন। দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে মাস্টার্সে পড়ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। অন্য ছেলে অনার্সে।

আভা রানীর মতো সচ্ছলতার এমন চিত্র বিলপাড়ের ১৩শ’ ভূমিহীন নারীর সংসারে। দীর্ঘ ২৩ বছর নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে পুরুষের সাথে বিলকুড়ালিয়ার ১৪শ’ বিঘা খাসজমিতে নিজেদের সম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন নারীরা। সাথে রয়েছেন স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা নারীও। নারী হয়েও ঘরে বন্দি না থেকে তারা কোমড়ে কাপড় পেঁচিয়ে নেমেছেন ফসলের মাঠে। পুরুষের সাথে ফসল বোনা থেকে শুরু করে ঘরে তোলা পর্যন্ত পরিশ্রম করেন এসব ভূমিহীন নারীরা। যাদের মুখে এখন শুধুই এগিয়ে চলার গল্প।

স্বামী পরিত্যক্তা আনোয়ারা খাতুন, বিধবা ফুলজান বেওয়া ও জরিনা খাতুন বলেন, ‘২২ বছর আগে ঠিকমতো তিনবেলা খেতে পারতাম না। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারতাম না। সমাজের মানুষ কেমন যেন একটু অন্যরকম চোখে দেখতো। সম্মান দিতো না। এখন বিলকুড়ালিয়ার খাসজমি নিয়ে আন্দোলন করে জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত পেয়েছি। ঘরে সারা বছরের খাবার জন্য ধান থাকে। ছেলে-মেয়েরা ভাল স্কুল কলেজে পড়ে। সমাজের সবাই সম্মান করে, সম্মান দেয়।’

ভূমিহীন নেত্রী চাম্পা খাতুন ও ছানোয়ারা খাতুন বলেন, ‘গ্রামের নারী বলে এখন আর আমরা পিছিয়ে নেই। ঘরে বসে থাকি না। পুরুষের সাথে কাজ করি, ফসল ফলিয়ে ঘরে তুলি। বিলকুড়ালিয়ার নারী-পুরুষ সমান অধিকার নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করছি। খাসজমিতের আমাদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া, বড় সফলতা।’

ভূমিহীন উন্নয়ন সংস্থার (এলডিও) নির্বাহী পরিচালক আতাউর রহমান রানা বলেন, ‘বিলকুড়ালিয়ার নারীরা পুরুষের সমান কাজ করেন, সমান ভূমিকা রাখেন। নারী-পুরুষের সম অধিকারে সরকারের যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়নে সকলের এগিয়ে আসা উচিত।’

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিলকুড়ালিয়ার ভূমিহীন নারীদের যে আন্দোলন তা অসামান্য। দীর্ঘদিন ঐক্যবদ্ধ থেকে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা তাদের মাঝে খাসজমি বন্দোবস্ত দিয়েছি। খাসজমির ফসলে তারা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে।’

প্রসঙ্গত: গত বছরের শেষের দিকে বিলকুড়ালিয়ার ১৪শ’ বিঘা খাসজমি বিলপাড়ের ১৩শ’ ভূমিহীন পরিবারের মাঝে স্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়া শুরু করেছে সরকার। ইতোমধ্যে ৮শ’ পরিবার জমির দলিল বুঝে পেয়েছেন। এর মধ্যে স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা রয়েছেন ২১৮ জন।

(দ্য রিপোর্ট/এসবি/এনআই/মার্চ ০৮, ২০১৬)