উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইনের খসড়া পর্যালোচনার নির্দেশ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : উপানুষ্ঠানিক বোর্ড গঠন ও আইন বাস্তবায়নে কমিটি গঠনের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে আবারও ‘উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন, ২০১৪’ এর খসড়া বৈঠকে উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, বৈঠকে আলোচিত হলেও ‘উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন, ২০১৪’ এর খসড়া অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রিসভা। বৈঠকে আলোচনায় কিছু পর্যবেক্ষণ এসেছে। পর্যবেক্ষণ আমলে নিয়ে খসড়া প্রস্তুতের পর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপন করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রিসভা খসড়ায় থাকা উপানুষ্ঠানিক বোর্ড গঠনের বিষয়টি পর্যালোচনা করতে বলেছে। এ ছাড়া আইন বাস্তবায়নে বেশ কয়েকটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। কমিটিগুলোসহ আরও কিছু বিষয় কারিগরি শিক্ষা কিংবা আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা তা খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
গত ৬ জুন খসড়া আইনটি নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
খসড়া আইনটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত ৮ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত নারী-পুরুষ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় আসবে। এ ছাড়া উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা হবে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমমানের।
নীতিগত অনুমোদনের সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছিলেন, উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক স্তরের শিক্ষায় ভর্তি হওয়ার বয়স ৮ থেকে ১৪ বছর ও বয়স্ক শিক্ষার ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ৪৫ বছর করা হয়েছে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সাক্ষরতা ছাড়াও কৃষি, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা, বন ও পরিবেশ, মৎস্য ও পশু পালন, কুটির শিল্প, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক কাজ ইত্যাদি বিষয় পর্যায়ক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
আর্থ-সামাজিকসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে অনগ্রসর ও সুযোগবঞ্চিত জনগোষ্ঠী যেমন- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, অনগ্রসর এলাকায় (হাওর, চর, উপকূলীয় ও পার্বত্য অঞ্চল) বসবাসকারী জনগোষ্ঠী, দুস্থ জনগোষ্ঠী (পথশিশু, বেকার যুবক ও যুব মহিলা, স্বল্প আয়ের শ্রমিক ও কর্মজীবী পুরুষ-মহিলা) এবং প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক শিশু, যুবক ও যুব মহিলারাও এ আইনের আওতায় আসবে।
কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের যে কোনও পর্যায়ে ব্যত্যয় ঘটালে বা বাধা দিলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং এর জন্য দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হবে বলে খসড়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ আইনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে ঝরে পড়া ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন করা এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানব সম্পদে পরিণত করা হবে।
খসড়া আইন পর্যালোচনা করে আরও দেখা গেছে, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মান সাধারণ শিক্ষার সমমানের হবে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকার অনুমোদিত একটি একক কারিকুলাম অনুসরণ করা হবে। এই শিক্ষা সমাপনকারীদের যথাযথভাবে যোগ্যতা যাচাইয়ের পর উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ সনদ দেবে। এই সনদ দিয়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার কোন শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিক শিক্ষার যে কোন প্রতিষ্ঠানে পরবর্তী স্তরে ভর্তি হবার যোগ্য হবে। একইভাবে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সনদপ্রাপ্ত কোন শিক্ষার্থী উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার পরবর্তী স্তরে ভর্তি হতে পারবে।
খসড়া আইনে আরও বলা হয়েছে, উপানুষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে প্রদত্ত সনদের স্তরভিত্তিক একই গুরুত্ব, মর্যাদা ও উপযোগিতা থাকবে। এই দুই ধরনের শিক্ষার সনদের গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে কোন প্রভেদ করা যাবে না।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সকল স্তরে পাঠদানের মাধ্যম হবে বাংলা। তবে বোর্ড কর্তৃক নির্বাচিত অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ইংরেজি বিষয়ও একই সাথে পড়ানো হবে। নৃ-গোষ্ঠীর জন্য তাদের প্রধান-প্রধান স্বকীয় ভাষায় পাঠদানের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হবে।
আইন অনুযায়ী, সনদ প্রদানের জন্য আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় সনদ দেওয়ার জন্য অনুরূপ স্বায়ত্বশাসিত একটি বা সরকার নির্ধারিত সংখ্যক উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড থাকবে। যার সাংগঠনিক কাঠামো এবং জনবল সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হবে। বোর্ড সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে নিজস্ব উপ-বিধি ও কর্মপ্রণালী প্রণয়ন করতে পারবে।
জাতীয় পর্যায়ে নীতি নির্ধারণে সরকারকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার বিষয়ে পরামর্শ প্রদান ও চলমান কাজ মূল্যালনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর নেতৃত্বে পেশাজীবী, বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বেসরকারি সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে বলে খসড়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজ নিজ ক্ষেত্রে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন এবং সরকার নির্দেশিত সহযোগিতা দেবেন। এ ছাড়া উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিধির আওতায় স্থানীয় সরকারকে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করা হবে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমে সরকারি, বেসরকারি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করাসহ বেসরকারি অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করা হবে বলেও খসড়া আইনে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া গত ৩ থেকে ৬ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নবম মিনিস্ট্রেরিয়াল কনফারেন্সে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণ সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়েছে।
দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এমএআর/আরকে/ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৪)