রাজনৈতিক অস্থিরতায় সিলেটে পর্যটন শিল্পে ভাটা
মনোয়ার জাহান চৌধুরী, সিলেট : ‘শীত শুরু তো সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর যৌবন শুরু’- রাজনৈতিক অস্থিরতায় এবার সেই পর্যটন শিল্পে অনেকটা ভাটা পড়েছে। ফলে এ বছরই হাজার কোটি টাকার পর্যটন বাণিজ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সিলেট।
পর্যটন শিল্পের নতুন সম্ভাবনার নাম সিলেট। এখানে আছে দেশের একমাত্র মিঠাপানির সোয়াম্প ফরেস্ট, প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি জাফলং আর নানা নৈসর্গিক স্থান।
এ ছাড়া হযরত শাহজালাল (র.) ও শাহপরাণ (র.)’র মাজারকে ঘিরে সারাবছরই সিলেটে থাকে ভক্তদের আনাগোনা। মাজার আর প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসেন ভক্ত ও পর্যটকরা।
পর্যটকদের এই সম্ভাবনায় সিলেটে গড়ে উঠেছে ২১টি আন্তর্জাতিক মানের হোটেলসহ আড়াই শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট। কিন্তু নির্বাচনপূর্ব টানা অবরোধ ও নির্বাচন উত্তর আতঙ্কে এ খাতে নেমে আসে বিপর্যয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধু রুমভাড়া বাবদ তাদের প্রতিদিন প্রায় ৫ কোটি টাকা করে লোকসান গুনতে হয়েছে গত ৬ মাসে।
শীতের আগে থেকেই সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সাজানো হয়েছে নানা আকর্ষণীয় সাজে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার ডামাডোলে এবার সিলেটে পর্যটক নামেননি। ফলে সবুজ চা বাগানের কার্পেট, মাধবকুণ্ডের জলপ্রপাত, জাফলংয়ে ভারত থেকে পাথর নিয়ে নেমে আসা পিয়াইন নদী, জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, ভোলাগঞ্জের সারি সারি পাথরের স্তূপও আতঙ্ক ছাপিয়ে পর্যটকদের টানতে পারেনি।
এ ছাড়া লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, সাতছড়ি রেইন্ট্রি ফরেস্ট, টাঙগুয়া আর হাকালুকি হাওরও এবার অনেকটাই পর্যটক শূন্য।
হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহপরাণসহ (র.) অগণিত পীর-আউলিয়া, সাধু-দরবেশের স্মৃতিবিজড়িত সিলেট প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও ভরপুর। প্রকৃতি যেন অতি যতনে রূপের রানী করে দিয়েছে সিলেটকে। সারি সারি চা বাগান, যতদূর চোখ যায় কেবল সুবজ আর সবুজ, উঁচু-নিচু পাহাড়-টিলা, গহীন অরণ্য, ঝর্ণাধারা, পাথরের খনি, পান-সুপারির বাগান, সুবিস্তৃত হাওর-বিল-ঝিল কী নেই এই সিলেটে। আছে সমতলের বাঙালীর পাশাপাশি অনেকগুলো আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও জীবনধারা। আর এ সব কিছুই দেশ-বিদেশের পর্যটককে টেনে আনে সিলেটে। সারা বছরই সিলেটে কম-বেশি পর্যটকের আনাগোনা থাকে।
সিলেটে বেড়াতে এসে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রায় সবাই ছুটে যান হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহপরাণ (র.) এর মাজারে। সিলেট নগরীতেই মাজার দু’টির অবস্থান। পর্যটকদের কাছে টানতে অতুলনীয় সিলেটের জাফলংও। নিজের সৌন্দর্যের জন্যই তার আদূরে নাম প্রকৃতিকন্যা।
জাফলংয়ের সৌন্দর্য দেখে কবি বলেছেন, ‘এখানে আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায়।’ খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলংয়ের পাহাড়, ঝর্ণা, নদীর স্বচ্ছ পানি, পাথরের সারি, পান-সুপারি আর চা বাগান পর্যটককে মুগ্ধ করে। জাফলংয়ের পথেই চাইলে যাওয়া যায় লালাখালে। যেতে হবে স্পিডবোটে। নদীর স্বচ্ছ পানিতে নৌকাভ্রমণ, আর লালাখাল পর্যটনস্পটে ঘুরে বেড়ানোর অনুভূতিই আলাদা।
সিলেটে বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান নাজিমগড় রিসোর্ট ব্যবস্থাপক হাসান মোর্শেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, হরতাল ও অবরোধের সময় তাদের দু’টি প্রতিষ্ঠানে মাসে কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। শুধু পর্যটকশূন্যতার কারণে।
হোটেল নির্ভানা ইন-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহমিন আহমদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে সিলেটে ভিড় করেন পর্যটকরা। এ তিন মাসে সিলেটের বিভিন্ন অভিজাত হোটেল মালিকরা প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকা আয় করেন। কিন্তু এ বছর রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে ব্যবসায়ীরা ২ কোটি টাকাও আয় করতে পারেননি। কারণ শুধু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সিলেট ছিল পর্যটকশূন্য।
(দ্য রিপোর্ট/এমজেসি/এসবি/এনআই/ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৪)