সাগরিকায় উইকেটেই স্বপ্ন-প্রত্যাশার আলো
আরিফ সোহেল, দ্য রিপোর্ট, চট্টগ্রাম থেকে : শেষ ম্যাচে সাগরিকার উইকেটই নায়ক বনে যেতে পারে- ঠিক এমটাই ঘুরে-ফিরছিল। সোমবার অনুশীলনের সময় তাই ২ দলই যেন নিখুঁতভাবে উইকেট পরখ করার চেষ্টা করেছে। অনুশীলনে মনসংযোগ দেওয়ার আগেই যে উইকেটে টেস্ট তার আশপাশে ঘুর-ঘুর করেছেন ক্রিকেটাররা। সাগরপাড়ের উইকেট বলেই এত কথা। মঙ্গলবার ম্যাচ শুরু হবে সাড়ে ৯টায়। প্রস্তুত সাগরিকায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। তবে এমন উইকেটে যারা টস জিতবে; তারাই বেছে নেবে ব্যাটিং। সোমবার অনুশীলনের সময় দর্শকের বাড়তি বিড়ম্বনা না থাকলেও আয়োজকরা জানিয়েছে, মঙ্গলবার গ্যালারি খুব ফাঁকা থাকবে না।
ঢাকার টেস্টে বড় হারের পরও চট্টগাম টেস্ট শুরুর আগে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছিল শ্রীলঙ্কার গলে। এক বছরও হয়নি; ২০১৩ সালের মার্চের সেই ম্যাচের কথা। দুর্দান্ত কিছু টেস্টময় স্মৃতি সেখানে জড়িয়ে রয়েছে। এক ম্যাচের এক ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিক; আশরাফুল ১৯০ আর তাদের পাশে সেঞ্চুরিতে নাম লিখিয়েছেন নাসির। সঙ্গে ৬৩৮ রান করে ৬৮ রানের লিড। শ্রীলঙ্কার ৫৭০ রানের জবাবে ওই রান তুলেছিল বাংলাদেশ। পরের ইনিংসে ঝুঁকি নিতে চায়নি শ্রীলঙ্কা। বিপদমুক্ত অবস্থানে গিয়ে ম্যাচ ছেড়ে, ড্র নিয়ে হাফ ছেড়ে বেঁচেছিল।
আরেকটি ম্যাচ; যেটি এই সাগরিকায় গত বছর অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিপক্ষ ছিল নিউজিল্যান্ড। সেখানেও সম্মানের ড্র করেছে ৫ দিনে গড়ানো টেস্ট। রেকর্ড গড়েছেন সোহাগ গাজী।
ওই দুই টেস্টের সঙ্গে হয়নি সবটাই বিনিসূতোর গাঁথুনি। যোগ-বিয়োগ সমীকরণ অনেক কিছুই মিলবে না তার সঙ্গে এই ম্যাচের। তবে এটা ঠিক একটি টেস্ট শুরুর আগে ইতিবাচক অনেক কিছুই আলোর বাতিঘর হয়ে সামনে দাঁড়ায়। যেখানে অনুপ্রেরণা খোঁজার পথ থাকে বাংলাদেশের।
ঢাকা বাইরে ম্যাচ কাভার করার ক্ষেত্রে নানাধরনের বাড়তি রিপোর্ট হর-হামাশাই প্রয়োজন হয়। তখন এনিয়ে-বিনিয়ে-ফিনিয়ে রিপোর্ট তৈরি করার সুযোগ থাকে। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। একজন উইকেটঅজ্ঞ তার কর্মযজ্ঞ নিয়ে তেমন কথা বললে; কপালে চোখ উঠবেই। তেমন কথাই বলেছেন সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্রাউন্ড নিয়ে একজন। তার নাম জাহিদ রেজা বাবু। তিনিই আবার এই স্টেডিয়ামেরই কিউরেটর। জানিয়েছেন দারুণ গল্প!
সাগরিকায় খুব কাছ ঘেঁষেই বঙ্গোপসাগর। মাটির তলায় পানির রাজ্যে সমুদ্রের পানির নিত্য চলাচল। লবণাক্ত পানির ছোবলেই দিন বিশেক আগে সাগরিকার ঘাস সাদাটে মলিন হয়ে পড়েছিল। ছিল একটু এবরো-থেবরো মাঠও। মিডিয়ায় খবর চাউড় হওয়ার পর ঘুম ভেঙেছিল বিসিবির। তারপরও রাত-দিন শ্রম বিনিয়োগ; তদারকি নিবিড় যত্ম-আত্তিতে সুশোভিত-সবুজ হয়ে ওঠেছে সাগরিকা। যেন প্রাণের ছোঁয়া লেগেছে পুরো মাঠজুড়ে। মাত্র ২০ দিন ম্লান-মলিন হয়ে পড়া একটি ঘাসের মাঠকে এভাবে প্রাণোসম্পন্দে জাগিয়ে তোলার কাজটি সহজ ছিল না। মাঠের রসদ যোগাতে ফেলতে হয়েছে প্রায় ২০ ট্রাক বালি, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বুনতে হয়েছে সবুজ দুর্বা ঘাস। দ্রুত সবুজাভ হয়ে উঠার জন্য দিতে হয়েছে ইউরিয়া সারও। বাইরে থেকে সাগরিকার আউটফিল্ড নির্মম সুন্দর মনে হলেও কাছ থেকে একটু খুঁত ধরা পড়েছে। ঘাসের ফাঁকে ফাঁকে বালিময় আলোক-দ্র্যুতি। রোদের আলো পড়লেই চিকচিক করে ওঠছে; সারা মাঠ। না, তাতে খেলার খোনো ব্যত্যয় ঘটার সুযোগ নেই। উইকেটটি স্লো এবং স্পিনবান্ধব হয়ে তাই প্রকারান্তরে জানিয়েছেন কিউরেটর।
২০০৬ সালে অভিষেক হওয়া সাগরিকার রেকর্ড তেমন আর কী! তবে বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট। ১১ ম্যাচের জন্য কমপক্ষে ৪ উপলক্ষ এসেছিল টেস্ট জয়ের। জিততে জিততে হেরে যাওয়ার পরও এখানে বাংলাদেশ জয়ের অভিযাত্রা খোঁজার চেষ্টা করেছে। এখানে অনুষ্ঠিত ১১টি টেস্টের মধ্যে ৩টি ড্র, নিসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। ২০০৬ সালে ভারতের বিপক্ষে, ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ ড্র করেছে। সাগরিকায় অনুষ্ঠিত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২ ম্যাচই হেরেছে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালে ৮ উইকেটে, পরে ২০০৯ সালে ৪৬৫ রানে।
এমন উইকেটে এক সিমার কম খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে। বাড়ছে একজন স্পিনার। সে ক্ষেত্রে মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদের খেলার সম্ভাবনাই বেশি। সেখানে বাদ পড়ছেন সিমার রবিউল ইসলাম। আর টপ অর্ডারে ইমরুল কায়েস ফেরাও প্রায় নিশ্চিত। সেখানে কপাল পুড়তে পারে মার্শাল আইয়ুবের। তবে কথার চালে নির্বাচকরা কিন্তু মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ঝুলিয়ে রেখেছেন মার্শাল আইয়ুর এবং আব্দুর রাজ্জাককে।
অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা দলেও ২টি পরিবর্তন নিশ্চিত করা হয়েছে। এখানে রঙ্গনা হেরাথের বদলে খেলছেন অজান্তা মেন্ডিস।
সম্ভাব্য বাংলাদেশ : তামিম ইকবাল, শামসুর রহমান, ইমরুল কায়েস, মমিনুল হক, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, নাসির হোসেন, মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ, সোহাগ গাজী ও আল-আমিন।
(দ্য রিপোর্ট/এএস/ওআইসি/সা/ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৪)